অঋনদম সরকারঃ আজ বিশ্ব সাইকেল দিবস। পদচারণ থেকে শুরু করে সাইকেল, তারপর বাইক – যাতায়াতের ক্ষেত্রে অনেক বিপ্লব এসেছে। কিন্তু সাইকেলের গরিমা আজও অম্লান – বিশেষ করে পরিবেশ বান্ধব বা স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে। এছাড়া আর্থিক দিক তো রয়েছেই। আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনে আমরা এমনই কিছু জানা অজানা তথ্য জানব।
আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে আমাদের চারপাশে পেট্রোল চালিত যানবাহনের এত প্রতিপত্তি ছিল না, সাইকেল ছিল মানুষের প্রধান যাতায়াতের মাধ্যম কিন্তু বিশ্বায়নের সঙ্গে বদলেছে সমাজ ব্যবস্থা , বদলেছে মানুষের জীবনজীবনযাপনের শৈলী । মানুষের কাছে আজ আর সময় নেই। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলার এই দৌড়ে কোথাও যেন খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে সাইকেল।
আমরা যারা ৮০ র দশক বা তার আগে জন্মেছি, তাদের কাছে সাইকেল আজকের দিনের দামী মোটর বাইকের থেকে কোনো অংশেই কম ছিলনা । একটা সাইকেলের জন্য বাড়িতে রীতিমতো কাকুতি-মিনতি করতে হত । বাড়ির বড়দের করুনা পরবশত তারপর যদি নতুন একটা সাইকেল আসত , তাহলে রোজ দুবেলা তাকে পরিস্কার করা ছিল নিত্য দিনের কাজ । সন্তান স্নেহে সামাল দেওয়া হত তাকে ।
কিন্তু এই দিন বদলের কাব্যে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে আমাদের এই প্রিয় সঙ্গী , ঝুল কালি মেখে পড়ে আছে বাড়ির একটি কোনায় । কিন্তু জানেন কি ? সাইকেল কেবল স্বল্প মূল্যে পরিবহনের সুবিধাই দেয়না, সঙ্গে সতেজ রাখে আমাদের শরীর ও মনকে।
তাই আজ সারা পৃথিবী জুড়ে জিম ও ব্যায়ামের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে সাইকেল । সাইক্লিং হল এমন একটি ব্যায়াম যা শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ায় এবং এর ফলে ফুসফুস অনেক বেশি পরিমাণ অক্সিজেন রক্তে মিশিয়ে দেয় যা জয়েন্ট পেইন, বাত, ওবেসিটি সহ অনেক রোগ থেকে আমদের রক্ষা করে ।
আজও অনেকে দামী সাইকেল কেনেন শখে কিংবা শুধুই মেদ ঝরাতে। সাইকেলকে বাঁচিয়ে রাখতে ও সাইকেলের উপকারিতা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে , সারা বিশ্ব জুড়ে পালন করা হচ্ছে, “বিশ্ব সাইকেল দিবস” (World Cycle Day).
পোলিশ প্রফেসর লেসজেক সিবিলস্কি(Leszek Sibilski) ই হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি পোলিশ কমিউনিটির মানুষদের নিয়ে জাতিসঙ্ঘের(UN)কাছে আবেদন জানান “বিশ্ব সাইকেল দিবস” পালনের জন্য। সেই সময় ৫৬ টি দেশ এতে সমর্থন জানায় । অবশেষে রাষ্ট্র সংঘের মহাসভা (United Nations General Assembly) ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ঘোষণা করে, ৩ রা জুন সারা বিশ্ব ব্যাপী পালিত হবে বিশ্ব সাইকেল দিবস (World Cycle Day).
এর পর থেকে প্রতিবছর 3 জুন নিয়ম করে পালিত হয় বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস। যার উদ্দেশ্য হল আমাদের সাধারণ জীবন যাত্রার নৈমিত্তিক পরিবহনে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সাইকেল চালানোর অভ্যাস গড়ে তোলা এবং এর মধ্য দিয়ে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করা।
বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস সাইকেলের দীর্ঘায়ু, স্বতন্ত্রতা এবং বহুমুখিনতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতি জনসাধারনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পাশাপাশি এটিকে একটি সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, সহজ, পরিচ্ছন্ন এবং পরিবেশগতভাবে উপযুক্ত টেকসই পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়ার বার্তা দেয় ।