চন্দ্রিমা দাসঃ হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী, ভারতবর্ষে যে চারটি ধাম আছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হল – পুরী ধাম। যেটি আমাদের কাছে ‘ শ্রীক্ষেত্র ‘ নামেও পরিচিত। কথিত আছে, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন কে ভগবান শ্রী বিষ্ণু ‘ নীল মাধব ‘ খুঁজে উদ্ধার করার জন্য স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন। এই নীলমাধবই হলেন পুরীর আরাধ্য শ্রী জগন্নাথ দেব।
![](https://nabachetan.com/wp-content/uploads/2022/07/puri-1.webp)
![](https://nabachetan.com/wp-content/uploads/2022/07/puri-1.webp)
প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা পালিত হয় – যেটি শ্রীক্ষেত্রের অন্যতম মহোৎসব। সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও দর্শনার্থীরা এই সময় ছুটে আসেন প্রভুর দর্শন পাওয়ার জন্য। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই সময় যার যা মনোকামনা আছে, তা প্রভুকে জানালে অবশ্যই পূরণ হয়।
![](https://nabachetan.com/wp-content/uploads/2022/07/puri-2.webp)
![](https://nabachetan.com/wp-content/uploads/2022/07/puri-2.webp)
রথ যাত্রা কেন হয় তা নিয়ে বহু পৌরাণিক কাহিনী আছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি প্রচলিত ধারণা হল – একদিন দেবী সুভদ্রার নগর পরিক্রমা করার ইচ্ছা জাগে। তিনি এই ইচ্ছা তাঁর দাদা জগন্নাথদেব ও বলরাম কে জানান। তাঁরা তাঁদের নিজেদের এক একটি রথ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পরিক্রমা করতে। পরিক্রমা শেষে তাঁরা তাঁদের মাসি গুন্ডিচা দেবীর বাড়ি যান, সেখানে সাত দিন কাটানোর পরে আট দিনের মাথায় আবার পুরীতে ফিরে আসেন। এই সাত দিনে ভগবানকে বিভিন্ন ধরণের আহারাদি দেওয়া হয় এবং দেবদাসী – মাহারি প্রথায় ওড়িশি নৃত্যগীতের মাধ্যমে মনোরঞ্জন করানো হয়।
![](https://nabachetan.com/wp-content/uploads/2022/07/puri-3.webp)
![](https://nabachetan.com/wp-content/uploads/2022/07/puri-3.webp)
শ্রী জগন্নাথদেব, দেবী সুভদ্রা ও শ্রী বলভদ্র এর রথের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। রথগুলি প্রতি বছর নতুন ভাবে ও সম্পূর্ণ হাতে তৈরী করা হয়। রথ তৈরীর কাঠ মহানদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয় যেগুলি পুরীর কাছাকাছি এলে সংগ্রহ করে নেওয়া হয়। জগন্নাথের রথের নাম নান্দিঘোষ, ১৬টি চাকার এই রথে মোট ৮৩২টি কাঠের টুকরো দিয়ে রথ তৈরী হয়। বলভদ্র এর রথের নাম তালধ্বজা। এই রথে মোট ১৪টি চাকা এবং রথ তৈরী করতে মোট ৭৬৩টি কাঠের টুকরো লাগে এবং দেবী সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন। এই রথে মোট ১২টি চাকা আছে এবং রথ তৈরী করতে মোট ৫৯৩টি কাঠের টুকরো লাগে।
![](https://nabachetan.com/wp-content/uploads/2022/07/puri-4.webp)
![](https://nabachetan.com/wp-content/uploads/2022/07/puri-4.webp)
বহু সময় ধরেই শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের মন্দিরের সাথে জড়িয়ে আছে নানা অজানা রহস্য, যা আজ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক ভাষায় প্রমাণ করা যায়নি।
১) জগন্নাথ মন্দিরের উপরের যে সুদর্শন চক্র আছে, সেটি মন্দির চত্বরের যে কোন স্থান থেকে দেখলে মনে হবে যে সেটি চক্রের সম্মুখ ভাগ।
২) মন্দিরের উপরের ধ্বজা হাওয়ার উল্টো দিকে উড়ে যায়। এমনকি মন্দিরের উপর দিয়ে কোন পাখি/প্লেন যায় না।
৩) বিগত ১৮০০ বছর ধরে মন্দিরের উপরের ধ্বজা পরিবর্তন রীতিটি চলে আসছে। কোন দিনও যদি এই রীতি পালন না করা হয় তাহলে আগামী ১৮ বছর মন্দির বন্ধ রাখতে হবে।
৪) কথিত আছে, জগন্নাথ দেবের বিগ্রহ নির্মাণ করেছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। তিনি একজন অন্ধ বৃদ্ধ মানুষের রূপ নিয়ে বিগ্রহ তৈরী করতে আসেন এবং রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন এর কাছে শর্ত রাখেন যত দিন না তার সম্পূর্ণ কাজ শেষ হচ্ছে তার আগে তিনি প্রভুকে দর্শন করতে পারবেন না। কিন্তু কিছু সময় পরে রাজা অধৈর্য্য হয়ে বন্ধ ঘরের দরজা খুলে দেন। যার ফলে বিগ্রহের অসম্পূর্ণ অবস্থায় সেটিকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
৫) পুরীর মন্দিরে প্রতিদিন একই পরিমাণের ভোগ প্রসাদ তৈরী করা হয়। মন্দিরে প্রতিদিন প্রায় ২০০০ থেকে ২০,০০০ দর্শনার্থী আসেন। তবু আজ পর্যন্ত কোন দিন প্রসাদ নষ্ট বা কম পড়েনি।
৬) জগন্নাথ মন্দিরের চারটি দিকে চারটি দরজা আছে। তার মধ্যে একটি অন্যতম হল – সিংহদুয়ার। আশ্চর্যের বিষয় হল – এই দরজা দিয়ে মন্দিরে ঢোকার সময় সমুদ্রের ঢেউ এর আওয়াজ শোনা যায়। কিন্তু একই দিকে ফেরত এলে বা মন্দিরের ভিতরের কোথাও এই শব্দ পাওয়া যায় না।
৭) পুরীর মন্দিরের ভোগ রান্নার পদ্ধতিটি বেশ রহস্যজনক। সম্পূর্ণ কাঠের আগুনে রান্না করা হয়। একটির উপর একটি করে মোট সাতটি মাটির পাত্র পর পর থাকে। আশ্চর্যের বিষয় হল – সবথেকে উপরে যে পাত্রটি থাকে তার রান্না সবার আগে সম্পূর্ণ হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, মা লক্ষ্মী স্বয়ং এসে এই রান্না করেন।
৮) জগন্নাথদেবের মন্দিরের ছায়া মন্দির চত্বরের কোন স্থানেই পড়ে না।