অঋনদম সরকারঃ
তবু আমি সেই
নারী নহি; সে আমার হীন ছদ্মবেশ।
তার পরে পেয়েছিনু বসন্তের বরে
বর্ষকাল অপরূপ রূপ। —চিত্রাঙ্গদা
আরও পড়ুনঃ
- রেল এ গ্রুপ ডি পোস্টে ১ কোটি পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা শুরু হবে ১৭ আগস্ট
- ভারতীয় রেলের ICF এ বিভিন্ন ট্রেডে অ্যাপ্রেন্টিস নিয়োগ
- আজ রাজ্যের সমস্ত স্কুলের পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত রাজ্যের
- একাধিক সংস্থায় চাকরির খবর
- DRDO তে শতাধিক শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ
প্রাইড মাস বলতেই আমরা পশ্চিমের দিকে ছুটি । কিন্তু আমাদের আপন দেশে এই প্রাইড বা গরীমার ইতিহাস বা আখ্যান কম আকর্ষণীয় ও বৈচিত্র্যময় নয় । ভারতের হিন্দু পৌরাণিক আখ্যান বা কিংবদন্তিতে একের পর এক চরিত্রের হদিশ মেলে যারা প্রথম বা দ্বিতীয় লিঙ্গের দৌড় থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে স্বতন্ত্র অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন । এই সকল চরিত্রদের ছিল আবশ্যিক রূপে বিশেষ ধরনের কিছু অভিশাপ বা আশীর্বাদ দেওয়ার ক্ষমতা ।
হিন্দু পুরাণ অনুসারে স্বয়ং শ্রী বিষ্ণু মোহিনী অবতার গ্রহণ করেছিলেন । এবং এই অবতারেই ভষ্মাসুরের হাত থেকে দেবাদিদেব মহাদেবকে রক্ষা করেন তিনি । শ্রী বিষ্ণু মোহিনী রূপ ধারণ করে ভষ্মাসুরকে তার নিজের প্রতি আকৃষ্ট করেন। ভষ্মাসুর মোহিনীর প্রতি এতটাই আকৃষ্ট হন যে তিনি মোহিনীকে বিবাহ করার জন্য অনুরোধ করেন। পরের গল্পটা আমাদের সকলেরই জানা, মায়ায় মোহিত হয়ে নৃত্যের মুদ্রায় ভস্মাসুর নিজের মাথায় হাত রাখলে তৎক্ষণাত ভস্ম হয়ে যান । তবে মোহিনীর প্রতি শুধু ভস্মাসুরই নন আকৃষ্ট হন স্বয়ং মহাদেব , শিব এবং মোহিনীর মধ্যে এই প্রণয়ের কাহিনির উল্লেখ ভাগবত পুরাণে পাওয়া যায় । শ্রীভূতনাথ পুরাণ গ্রন্থ অনুসারে দক্ষিণ ভারতের অন্যতম পূজনীয় দেবতা আয়াপ্পানকে হরি ও হরের পুত্রের অবতার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে । যিনি আদপে শিব ও মোহিনীর পুত্র। অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের দুই পরম পুরুষের সন্তান।
মহাভারতের উদ্যোগপর্বে ১৭০তম অধ্যায় থেকে ১৯২তম অধ্যায় জুড়ে শিখণ্ডী র কাহিনী বর্ণিত আছে। ভীষ্ম কেন শিখণ্ডীর সঙ্গে যুদ্ধ করবেন না, দুর্যোধনের এই প্রশ্নের উত্তরে ভীষ্ম শিখণ্ডীর জীবনকাহিনি শুনিয়েছিলেন।মহাভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিলেন শিখণ্ডী । পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন তিনি , যিনি কন্যা রূপে জন্মেছিলেন। মহাদেব বর দিয়েছিলেন যে, দ্রুপদের সন্তান কন্যা রূপে জন্মালেও পরে সে পুরুষত্ব লাভ করবে। তাই দ্রুপদ ও দ্রুপদমহিষী শিখণ্ডীকে পুত্ররূপেই পালন করেন। দশার্ণাধিপতি হিরণ্যবর্মার কন্যার সঙ্গে শিখণ্ডীর বিবাহ দেওয়া হয়। বিবাহের পর অল্প সময়ের মধ্যেই হিরণ্যবর্মার দুহিতার কাছে শিখণ্ডীর নারীত্ব ধরা পরে যায়। ক্রুদ্ধ হিরণ্যবর্মা এই প্রবঞ্চনার জন্য যখন পাঞ্চালরাজ্য আক্রমণে প্রস্তুত হচ্ছেন, তখন শিখণ্ডী লজ্জায় ও শোকে প্রাণত্যাগের উদ্দেশ্যে এক নির্জন অরণ্যে প্রবেশ করেন। শিখণ্ডীর দুরবস্থা কথা শুনে সেই অরণ্যের অধিপতি যক্ষ স্থূণাকর্ণের দয়া হয়। কিছুদিনের জন্য তিনি শিখণ্ডীকে নিজের পুরুষত্ব দিয়ে শিখণ্ডীর নারীত্ব গ্রহন করতে সন্মত হন। শর্ত হয় হিরণ্যবর্মার কাছে নিজের পুরুষত্ব প্রমান করেই শিখণ্ডী আবার স্থূণাকর্ণকে পুরুষত্ব ফিরিয়ে দেবেন । কিন্তু যক্ষরাজ কুবের তা জানতে পেরে ক্রুদ্ধ হয়ে স্থূণাকর্ণকে অভিশাপ দেন যে, এই দুর্বুদ্ধির জন্য শিখণ্ডীর মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত, স্থূণাকর্ণকে নারী হয়েই থাকতে হবে।
শিখণ্ডী কাশীরাজের কন্যা অম্বার পরজন্ম । ভীষ্মের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই তার জন্ম । রাজকুমার শিখণ্ডী যে সম্পূর্ণ পুরুষ নন, একথা ভীষ্ম জানতেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি নারী, নারীবেশী পুরুষ, যে পুরুষ আগে নারী ছিল, নারীর নামধারী পুরুষ এবং ক্লীবের উপর অস্ত্রাঘাত করবেন না। তাই তিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় শিখণ্ডীর সাথে যুদ্ধ করেননি। অর্জুন তাই তাঁকে সামনে রেখেই ভীষ্মকে আঘাত করতেন। যুদ্ধের দশম দিনে শিখণ্ডী ও অর্জুনের তীরে আহত হয়ে ভীষ্ম রথ থেকে পড়ে যান এবং শরশয্যা গ্রহণ করেন।
পিতা ইন্দ্রের আমন্ত্রণে একবার অর্জুন তাঁর রাজসভায় যান। ইন্দ্রের রাজসভার অপ্সরা উর্বশী অর্জুনকে দেখে আকৃষ্ট হন। ইন্দ্র এই কথা জানতে পেরে উর্বশীর মনস্কামনা পূর্ণ করতে সম্মতি দেন । ইন্দ্রের কথা মতো এক রাতে উর্বশী অর্জুনের ঘরে উপস্থিত হলে অর্জুন উর্বশীর প্রতি কামভাব না রেখে তাঁকে কুরুদের “মাতা” বলে সম্বোধন করেন । কারণ উর্বশী কুরু রাজবংশের আদিরাজা পুরূরবার পত্নী ছিলেন। এই কথায় ক্রোধান্বিত হয়ে উর্বশী অর্জুনকে অভিশাপ দেন যে সমগ্র জীবন তিনি কিন্নরবা বৃহন্নলা হয়ে থাকবেন এবং অন্য নারীর সঙ্গে কেবল নাচ-গান করবেন। পরে ইন্দ্রের অনুরোধে উর্বশী এই শাপ একবছরে কমিয়ে আনেন। পান্ডবদের অজ্ঞাতবাসের ত্রয়োদশ বছরে এই অভিশাপ ফলে যায়। অজ্ঞাতবাসের একবছর অর্জুন বিরাট রাজার মৎস্য রাজ্যে বৃহন্নলা রূপ পরিগ্রহ করেছিলেন।ইন্দ্রের রাজসভার গন্ধর্ব চিত্রসেনের থেকে শিখে আসা গান এবং নৃত্যে তিনি বিরাট রাজাকে মোহিত করেন। তিনি তার কন্যা রাজকুমারী উত্তরাকে নাচ-গান শেখানোর জন্য বৃহন্নলাকে আদেশ দেন। বৃহন্নলা নারীদের জন্য অন্দর মহলে থেকে মেয়ে এবং বধূদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। তিনি এই সময়কালে রাজকুমারী উত্তরা সহ অন্তপুরবাসিনীদের নাচ ও গান শিখিয়েছিলেন।
এতো গেল হিন্দু উপাখ্যানের কথা কিন্তু হযরত ইব্রাহিম এর বংশধরদের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে প্রচারিত ইব্রাহিমীয় ধর্মগুলোতেও তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট উল্লেখ নেই । ইসলাম, খ্রিষ্ট ধর্ম, ইহুদি ধর্ম এগুলো সবই ইব্রাহিমীয় ধর্ম। প্রতিটি ইব্রাহিমীয় ধর্ম পুরুষ এবং নারী সৃষ্টির ব্যাপারে আদম এবং ইভ এর গল্প বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ প্রথমে মাটি থেকে তৈরী করেন আদম কে। আদমের বুকের পিঞ্জিরা দিয়ে তৈরী করেন ইভ কে। তাহলে আল্লাহ রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষ কিভাবে তৈরী করেন? নারী পুরুষের পাশাপাশি রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষ কিভাবে সৃষ্টি করা হলো এই বিষয়ে পৃথিবীর কোন ধর্মেই আলোচনা না করা হলেও এদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়নি । শান্তি এবং সাম্যের ধর্ম ইসলামে তৃতীয় লিঙ্গ বা রূপান্তরিত লিঙ্গদের মুখান্নাতুন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র আল কোরআনের কোথাও মুখান্নাতুন সম্পর্কে কিছু বলা হয় নাই। কিন্তু হাদিসে মুখান্নাতুনের উল্লেখ পাওয়া যায়। খ্রিস্টান ধর্মে একজন ইথিওপিয়ান ইনুখ সম্পর্কে আলোচনার কথা আছে। যীশু বলেন, “কিছু মানুষ আছে যারা জন্ম থেকে ইনুখ এবং আরো কিছু মানুষ আছে যাদেরকে অন্যেরা ইনুখ বানিয়েছে এবং আরো এক প্রকৃতির মানুষ আছে যারা স্বর্গরাজ্যের জন্য নিজেদেরকেই ইনুখ বানিয়েছে।” মোজেস বা হযরত মুসা এর অনুসারীদের কে বলা হয় ইহুদি। ইহুদি ধর্মে রূপান্তরিত লিঙ্গ বা ট্রান্সজেন্ডারদের “সারিস” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সারিস বলতে একজন লিঙ্গ নিরপেক্ষ বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি শক্তিমানের প্রতিনিধিত্ব করেন । অধিকাংশ বৌদ্ধ লিপিতে ধর্ম প্রতিপালনে কোন লিঙ্গভিত্তিক বিভাজন করা হয়নি।
প্রকৃতির অমোঘ খেয়ালে পৃথিবীতে উভয় লিঙ্গের সন্তানের জন্ম হয়। আগে থেকে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, কোন কোন নারী-পুরুষের সম্মিলনে উভলিঙ্গের সন্তানের জন্ম হবে । যা বলতেই হয় তা হল, এই তৃতীয় বৈশিষ্ট্যের মানব সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে মা-বাবা যেমন দায়ী নয়, তেমনি সন্তানেরও কোনো দায় নেই। জীব বিজ্ঞানীরা এই তৃতীয় লিঙ্গের মানব সন্তান জন্মের রহস্যকে এখন পর্যন্ত উন্মোচন করতে পারেননি। তাহলে প্রশ্ন আসে পৃথিবীর প্রথম তৃতীয় লিঙ্গ কে? এই বিষয়ে বিজ্ঞান এখনো কোনো সদুত্তর দিতে না পারলেও গ্রিক পুরাণে এর একটি সুন্দর বর্ণনা রয়েছে। দেবদূত হার্মেস এবং সৌন্দর্য, প্রেম ও যৌনতার দেবী আফ্রোদিতির পুত্র হার্মাফ্রোদিতাস ছিলেন পৃথিবীর প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের মানব।
ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত লিঙ্গরা হলেন সেইসব ব্যক্তি, যারা যে জৈবিক লিঙ্গের সাথে জন্মগ্রহণ করেন তার সাথে নিজের আত্মিক অবস্থানকে একীভূত করতে পারেন না। এদের লৈঙ্গিক পরিচয় বা প্রকাশ (জেন্ডার আইডেন্টিটি) জন্মগতভাবে তাদের জন্য নির্ধারিত জৈবিক লিঙ্গ থেকে পৃথক।
ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত লিঙ্গরা শারীরিকভাবে পুরুষ অথবা নারী হিসেবে জন্মগ্রহন করলেও এদের মানসিক লিঙ্গবোধ তাদের জৈবিক লিঙ্গের বিপরীত ।
কিছু ট্রান্সজেন্ডার এক লিঙ্গ থেকে অন্য লিঙ্গে রূপান্তরিত হতে চিকিৎসার সহায়তা নেয়। এদের ট্রান্সসেক্সচুয়াল বা রূপান্তরকামী বলা হয়। কিন্তু সকলের মধ্যে লিঙ্গ পরিবর্তন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় এবং এই প্রক্রিয়াতে একাধিক ঝুকি থাকায় অনেকেই পিছিয়ে আসেন ।
অনেকেই মনে করেন রূপান্তরিত লিঙ্গরা মানসিক অসুস্থতা বা বিকৃতির শিকার কিংবা সঙ্গ দোষে তাদের স্বভাব নষ্ট হয়েছে । শাসন ও মারধোর করলে এই ভূত তাদের মাথা থেকে নেমে যাবে। আবার অনেকেই মনে করে শিশুদের বেড়ে ওঠার সাথে এটি জড়িত , ছেলেরা পুতুল বা রান্নাবাটি খেললে, কিম্বা তাদের গোলাপী কাপড় পরালে, বা ঘরের কাজ করালে বড় হয়ে তারা তাদের পুরষত্ব (ম্যাস্কুলিনিটি) হারায় এবং এ ধরনের ছেলেদের ট্রান্সজেন্ডার হবার সম্ভাবনা থাকে । যদিও এসব একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা।
আমরা অনেক সময়ই ফর্ম ভরতে গিয়ে দেখতে পাই লেখা থাকে সেক্স ….. । কিন্তু এক্ষেত্রে হওয়া উচিত জেন্ডার । আমরা প্রায়শই জৈবিক লিঙ্গ (সেক্স) এবং লৈঙ্গিক পরিচয় (জেন্ডার আইডেন্টিটি) এর মধ্যে বিভ্রান্ত হই । জৈবিক লিঙ্গ পুরুষ এবং স্ত্রীদের মধ্যে জৈবিক পার্থক্য বোঝায়। এক্সএক্স এবং এক্সওয়াই ক্রোমোজোমের অন্তর । ডিম্বাশয় ও টেস্টেসের অন্তর , ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরনের অন্তর। আর লৈঙ্গিক পরিচয় বা জেন্ডার আইডেন্টিটি, পুরুষ এবং নারীদের মন-মানসিকতা, আচরণ, জীবনধারা, যৌন দৃষ্টিভঙ্গি এবং যৌন ক্রিয়াকলাপ সহ সমগ্র জীবনাচারকে বোঝায়। আমরা ধরেই নেই একজন নারী বা পুরুষের লৈঙ্গিক পরিচয় তার জৈবিক লিঙ্গ অনুযায়ী হবে। অর্থাৎ একটি মেয়ে শিশুর আচরণ সমাজের পূর্বনির্ধারিত মেয়েদের আচরনের মত হবে এবং ছেলেদেরর ক্ষেত্রেও সেই একই ধারণা প্রযোজ্য। ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত লিঙ্গদের ক্ষেত্রে এটা হয় না। জৈবিক লিঙ্গর সঙ্গে তাদের লৈঙ্গিক পরিচয় এবং জীবনাচার মেলে না।
শৈশব থেকেই একজন ট্রান্সজেন্ডার নানা অমানবিক আচরন, ঘৃণা এবং বঞ্চনার ভেতর দিয়ে বড় হয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবারসহ বাইরে সব জায়গায় তারা নানা অপমানের শিকার হয়। বহু ট্রান্সজেন্ডার মানুষ জেন্ডার ডিস্ফোরিয়াতে ভোগে। যা একজনের জৈবিক লিঙ্গ এবং লিঙ্গ পরিচয়ের মধ্যে অমিলের কারণে তৈরি হওয়া মনস্তাত্বিক অবস্থান। জেন্ডার ডিসফোরিয়া কখনো কখনো এত তীব্র হয় যা একজনকে প্রচন্ড হতাশাগ্রস্ত করে তুলতে পারে এবং যা থেকে আত্মহত্যার মত ঘটনাও ঘটতে পারে। ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত লিঙ্গরা আমাদের এই দেশ তথা সমাজের একটা অংশ কোনো ভীনগ্রহের এলিয়েন নয় তাই তাদের বিদ্রূপের দৃষ্টিতে দেখা থকে বিরত থাকুন। বিশ্ব জুড়ে বহু প্রতিষ্ঠান তাদের ন্যায্য সন্মান এবং অধিকার পেতে সাহায্য করছে । আমাদের দেশ বা রাজ্যও তার ব্যতিক্রম নয় । সামাজিক এবং ধর্মীয় বেড়াজালে আটকে থাকা নিয়ম থেকে বের হয়ে তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করুন যেন তারা একটি সুস্থ মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে এবং সমাজের সকল বৈরিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে।
ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রান্সজেন্ডার (দৃশ্যমানতা) দিবসে, শহর কোলকাতায়, LGBTQ+ কমিউনিটির দাবী দাওয়া নিয়ে পথে নেমেছিল সি পি আই এম দলের গণ সংগঠনগুলো । নাগরিক সমাজের চাওয়া পাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলদের মিছিল পথসভা বিক্ষোভ নতুন নয় তবে শিক্ষা আনে চেতনা আর চেতনা আনে বিপ্লব প্রমাণ করল যে কলকাতার বুকে এটি একটি ঐতিহাসিক কর্মসূচি ।
একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিই আইনসভায় নীতি গত পরিবর্তনের প্রতিভূ । যদিও তার বীজ সমাজ আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই রোপিত হয় । কিন্তু সামাজিক ও রাজনৈতিক এই দুইয়ের স্বচ্ছ , সংযত ও সময়োপযোগী মেলবন্ধন ছাড়া দেশের বৃহত্তর উন্নয়ন সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক এলজিবিটিকিউআইএ+ সমিতি একটি বামপন্থী গণ সংগঠন। এবং ভারতের প্রথম এলজিবিটি গণ সংগঠন। যারা ভারতের প্রান্তিক লিঙ্গ ও যৌনতার মানুষদের রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার এবং মানবাধিকারের দাবি নিয়ে পথে নেমেছে ।
এছাড়াও সম্প্রতি সংসদ অধিবেশনে তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার এলজিবিটি সম্প্রদায়ের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কনভারশন থেরাপির বিরুদ্ধে বিল এনেছিলেন যা নথিভুক্ত হয়েছে ।
তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের অধিকার রক্ষা আইন, ২০১৯এর ১৬ নম্বর ধারা অনুসারে কেন্দ্র ২১শে আগস্ট তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য একটি জাতীয় পরিষদ গঠন করেছে। কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রী পদাধিকার বলে এই পরিষদের চেয়ারম্যান এবং দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হবেন।
এই জাতীয় পরিষদ যে কাজগুলি করবে সেগুলি হল :
ক) তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি, বিভিন্ন প্রকল্প, আইন ও কর্মসূচি সংক্রান্ত পরামর্শ কেন্দ্রকে এই পরিষদ দেবে।
খ) তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের সম অধিকারের জন্য যেসব নীতি ও কর্মসূচি নেওয়া হবে সেগুলির নজরদারি ও মূল্যায়ন এবং এই কর্মসূচিগুলিতে তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
গ) সরকারের সমস্ত দপ্তর এবং অসরকারী সংগঠনগুলি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করবে সেগুলির মূল্যায়ণ ও সমন্বয়ের কাজ এই পরিষদ করবে।
ঘ) তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের বিভিন্ন অভাব-অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হবে এবং
ঙ) কেন্দ্রের নিয়মানুসারে এই সংক্রান্ত অন্যান্য কাজকর্মগুলি ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা তা এই পরিষদ দেখবে।
অতীতের অনেক সংস্কার থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি৷ তেমনভাবেই সভ্যতার নতুন দিকগুলোকে মেনে নিতে হবে ৷ দুজন একই লিঙ্গের মানুষ, তাদের মধ্যে ভালোবাসা বা শারীরিক আকর্ষণের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যদি ভালো থাকে তবে সেই নিয়ে সামাজিক ট্যাবু তথা গোঁড়ামির কোনো মানে হয়না কারন প্রেম তো প্রেমই ।