সুদীপ ঘোষঃ- ছ্যাঁকা লাগলেই শরীরে অসহ্য জ্বালা হয়, ফোস্কা পড়ে ও দাগ থেকে যায়। রান্না করতে গিয়ে আগুনের ছ্যাঁকা লেগে, গরম দুধ, জল ও চা পড়ে গিয়ে পোড়ার জ্বলন শুরু হয়ে যায়।
এসব ছোট খাটো আগুনের প্রদাহের জ্বালা ও ফোস্কার থেকে মুক্তি পেতে প্রাথমিক ভাবে ঘরোয়া টোটকা খুব কাজের হয়।
নিচের কয়েকটি সহজ উপায় জানা থাকলে পোড়ার ক্ষত ও যন্ত্রণা থেকে দ্রুত ও সহজ ভাবে মুক্তি ঘটে-
১. বরফের সেঁক:- পোড়ার জ্বলন থেকে স্বস্তি পেতে ও ফোস্কা আটকাতে ফ্রিজ থেকে দ্রুত বরফ এনে ঐ স্থানে দিতে হবে। এই বরফের সেঁক প্রায় ২০- ২৫ মিনিট ধরে দিতে হবে। তাছাড়া, বরফের ব্যবস্থা না করা গেলে, ঠান্ডা জলের সেঁক আলতো করে কিছুক্ষণ দিলেও কাজ হয়।
২.লাল চা:- হটাত কোনো অংশে ছ্যাঁকা লাগলে ঠান্ডা লাল চা তার উপশম দেয়। একটি ছোট গ্লাসে ঠান্ডা জলের সাথে কিছুটা চা গুঁড়ো বা টি ব্যাগ দিয়ে নাড়িয়ে নিতে হবে।
তারপর সেই চা জল পরিষ্কার কাপড় বা তুলো দিয়ে পোড়া স্থানে হালকা ভাবে লাগালে কিছুক্ষনের মধ্যে জ্বালা কমে যায়। আর ফোস্কা ও সহজে পড়ে না। তবে গ্রিন টি হলে সব থেকে ভালো হয়।
৩. মধু:- মধুর মধ্যে থাকা ইনফ্লেমেটরি , অ্যান্টি ব্যাটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান ছ্যাঁকা লাগা ত্বকের ব্যাথা ও যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। তাই পোড়া স্থানে তুলোর সাহায্যে প্রায় আধ ঘন্টা ধরে মধুর প্রলেপ দিতে থাকলে যন্ত্রণার মিটে যায় ও ফোস্কাও পড়ে না। শুধু ফোস্কার মুক্তি নয় সঙ্গে পোড়ার দাগও মিলিয়ে যায়।
৪.অ্যালোভেরা:- বাড়ির বাগানের অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর জেল আগুনে ছোট খাটো পোড়ার প্রাথমিক চিকিৎসাতে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া, বেশ কয়েকদিন নিয়মিত করলে ফোস্কা ও পোড়ার দাগ মিলিয়ে যায়।
৫. নারকেল তেল:- বাড়িতে ব্যবহৃত নারকেল তেলও ছ্যাঁকা লাগার কষ্টের মুক্তি দেয়। নারকেল তেল ফোস্কা রোধ, জ্বলন কমানো ও দাগ দূরীকরণে খুবই কার্যকর।
৬. ঠান্ডা দই ও দুধ:- বাড়ির ফ্রিজে থাকা ঠান্ডা দই বা দুধ ছ্যাঁকা লাগা স্থানে আলতো ভেবে কিছুক্ষন ধরে লাগালে পোড়ার জ্বালা কমে যায় এবং ফোস্কাও পড়ে না। দুধে থাকে জিংক, প্রোটিন ও ভিটামিন যা পোড়া ত্বকের পুনরুদ্ধারে দ্রুত কাজ করে।
৭. কাঁচা আলু:- রান্না করতে করতে শরীরে ছ্যাঁকা লাগলে আলুকে গোল করে কেটে বা থেঁতো করে পোড়া স্থানে চেপে ধরতে হয়। হালকা ভাবে ঐ আলুর অংশ কিছুক্ষন চেপে ধরলেই যন্ত্রণা কমে যায় এবং সহজে ফোস্কাও পড়ে না।
৮. ছানার জল:- গোয়ালারা দুধ থেকে ছানা তৈরিতে যে টক জল ব্যবহার করে তা ছ্যাঁকা লাগার যন্ত্রণা ও ফোস্কা মেটাতে খুব কার্যকর। তাই হাত- পা বা অন্য অঙ্গে ছ্যাঁকা লাগলে সঙ্গে সঙ্গে ছানার জলে ডুবিয়ে রাখলে বা লাগালে দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়।
ঐ টক ছানার জলে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে যা যন্ত্রণা কমাতে ও ফোস্কা আটকাতে দারুন কাজ করে।
৯. অলিভ অয়েল:– ত্বকের পরিচর্যাতে ব্যবহৃত অলিভ অয়েলও ছ্যাঁকা লাগা শরীরের অংশে ব্যবহার করা যায়। পোড়া স্থানে অলিভ অয়েল তুলোর সাহায্যে লাগালে জ্বালা ক্রমশ কমতে থাকে।
১০. ডিমের সাদা অংশ:– ছ্যাঁকা লাগা স্থানে কুসুমবিহীন কাঁচা ডিমের সাদা অংশ লাগালে জ্বালা দ্রুত কমে যায় এবং ফোস্কাও পড়ে না। ডিমের সাদা অংশে অ্যালবুমিন থাকে যা পোড়ার ক্ষত স্থানের যন্ত্রণা কমাতে ও ফোস্কা আটকাতে ভালো কাজ করে।
বিধিসম্মত সতর্কীকরণ:- এই সব ঘরোয়া উপায় শুধু মাত্র ছোট-খাটো ছ্যাঁকা লাগার ক্ষেত্রে কাজ করে। ওপরের দেওয়া টোটকা কখনই চিকিৎসার বিকল্প নয়। এমনকি এইগুলো ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে তবেই ব্যবহার করতে হবে। আগুনে পোড়া বা কোথাও ছ্যাঁকা লাগলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।