সুদীপ ঘোষঃ লাল মাটির দেশ বাঁকুড়া মানেই রুক্ষ মাটি, গভীর জঙ্গল, পিছিয়ে পড়া মানুষ আর পদে পদে অভাব অনটন। কিন্তু অভাব অনটনকে জয় করেই বাঁকুড়া বারবার নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়েছে শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও শিল্পকলায়। এবারও সারা দেশের কাছে রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করলেন বাঁকুড়ার মেয়ে প্রিয়রঞ্জনা বাউরি।
কেরালার কালিকটে জাতীয় জুনিয়ার উশু প্রতিযোগিতায় (Junior National Wushu Championship) ব্রোঞ্জ জিতে ঘরে ফিরলেন বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের সোনার মেয়ে। রাজ্যের হয়ে পদক জিতে দেশের কাছে দেখিয়ে দিলেন জঙ্গলমহলের রুক্ষ লাল মাটির ক্ষমতা। বাঁকুড়া জেলার অন্যতম পিছিয়ে পড়া মহকুমা খাতরার প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে প্রিয়রঞ্জনা বরাবরই মেধাবী ও খেলাধুলায় পারদর্শী।
বাবা একজন স্কুলের করণিক ও মা গৃহবধূ। প্রতিদিনের দারিদ্র্যতাকে জয় করেই প্রিয়রঞ্জনা ও তার ভাইয়ের পড়াশুনা ও খেলাধুলার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রিয়রঞ্জনার বাবা বিল্লোরঞ্জন বাউরি। এর আগেও বেঙ্গল অলিম্পিকে সোনা জিতে রাজ্য স্তরে নজর কেড়ে ছিলেন এই জঙ্গলমহলের কন্যা। তখন থেকেই তার পড়াশুনা ও খেলাধুলার উন্নতিতে পাশে দাঁড়ায় পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজন থেকে শিক্ষক- শিক্ষিকারা। খাতরা ব্লকের গোড়াবাড়ি হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী মাধ্যমিকে ৮৮% নম্বর নিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিলেন।
পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা সমান তালে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার দরুন এল জাতীয় সাফল্য। ব্রোঞ্জ জয়ের দিনই গ্রামের বাড়িতে শুরু হয় আনন্দ উৎসব। একের পর এক শুভেচ্ছা বার্তা আসে তার বাড়ির দরজায়। তারপর থেকেই চলছিল বাড়ি ফেরার অপেক্ষা। দেশ জয় করে সোনার মেয়ের বাড়ি ফিরতেই গ্রামের বাড়িতে আবার শুরু হল বিজয় উৎসব। গলায় মালা ও হাতে ফুলের স্তবক দিয়ে ঢাক- ঢোল নিয়ে মিছিল করতে করতে ঘরের মেয়েকে বরণ করে জঙ্গলমহলের মানুষ। ঘরের মেয়ের অভাবনীয় সাফল্যে খুশির হাওয়া বাঁকুড়া জুড়ে। আনন্দের অশ্রু ধরে মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে প্রিয়রঞ্জনার বাবা-মা। দেশ জয় করার পর এবার দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতায় জয়ের স্বপ্ন প্রিয়রঞ্জনার দু চোখে। বিশ্ব জয়ের লক্ষ্যে নিজের উশু খেলার জোর ও কৌশল আরও বাড়াতে চলেছেন জঙ্গলমহলের প্রিয়রঞ্জনা বাউরি।
দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সবার আগে জানতে লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও গুগল নিউজ