সুদীপ ঘোষঃ শীতের শুরুতে বছর শেষে বা নতুন বছরে বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবছেন? দু- একদিনের বেশি ছুটি ম্যানেজ করতে পারছেন না? তাহলে সেই দু- একদিনের ছুটিতেই বেড়িয়ে পড়ুন লোটাকম্বল নিয়ে। পরিবারের বাচ্চাদের ঘুড়িয়ে আনুন পলাশ ফুলের দেশ পুরুলিয়ার (Purulia) গড় পঞ্চকোট (Garpanchkot)। পাহাড়, নদী, সবুজ জঙ্গল, লেক ও ঐতিহাসিক স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহকুমার গড় পঞ্চকোট।
প্রাচীন কালে ৫ জন আদিবাসী নেতাদের নিয়ে গড় পঞ্চকোট দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন কাশিপুর রাজবাড়ির রাজা দামোদর শেখর। জঙ্গলমহল ও মানভূম জুড়ে ছিল তার বিশাল রাজত্ব। কিন্তু বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার পূর্ববর্তী তার দাদু আলীবর্দীর সময় মারাঠা বর্গী আক্রমণে ধ্বংসের মুখে পড়ে এই বিশাল দুর্গ। সেই থেকেই ধ্বংস প্রাপ্ত ৫ মাইল বিস্তৃত দুর্গ, টেরাকোটার রাসমন্দির, জোর মন্দির, পঞ্চকোট মন্দির, কংকালি মন্দির ইতিহাসের প্রবাহ বয়ে নিয়ে আসছে। বর্তমানে রাজ্য সরকার এই ধ্বংস প্রাপ্ত নির্দশন নতুন করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এই সুপ্রাচীন ইতিহাসের পাশেই আছে পাঞ্চেত পাহাড়ের সবুজ জঙ্গল। পলাশ ও অশোকের ঘন বন। এছাড়াও আছে সোনাঝুরি, ঝাল, সেগুন, শিশু ও অর্জুন। জঙ্গলে দেখা মেলে বন শুয়োর, হায়না, বাঘরোল, শিয়াল, বানর ও হরিণ। ময়ূর, ময়না, শালিক, টিয়া, কাকাতুয়া সহ গড় পঞ্চকোটের জঙ্গলে রয়েছে নাম না জানা অনেক দেশি ও বিদেশী পাখি।
গড় পঞ্চকোটের কাছেই অবস্থিত পুরুলিয়ার কাশিপুর রাজবাড়ী, সত্যজিৎ রায়ের “হীরক রাজার দেশে”- এর শুটিং স্পট জয়চন্ডীপাহাড়, দামোদর নদী, বরকর নদীর উপর পাঞ্চেত ও মাইথন বাঁধ, বরন্তি লেক, কল্যানেশ্বরী মন্দির ও স্নেক পাহাড়।
গড় পঞ্চকোটের বাগমারা গ্রামে গড়ে উঠেছে রাজ্য সরকারের বন দপ্তরের উদ্যোগে গড় পঞ্চকোট প্রকৃতি ভ্রমন কেন্দ্র। এছাড়াও বেসরকারি মালিকানায় অনেক হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও লজ আছে পর্যটকদের থাকার জন্য। আবাসনের ব্যালকনি বা জানলা থেকেই জঙ্গলের পশু ও পাখিদের বিচরণ দেখা যায়। আর সন্ধ্যে নামলেই আদিবাসী নৃত্যে মন ভরিয়ে নেন পর্যটকরা।
হাওড়া থেকে খড়গপুর বা আসানসোল হয়ে আদ্রা গামী ট্রেন ধরে কিংবা আসানসোল বা আরামবাগ- বিষ্ণুপুর সড়ক ধরে বাসে বা নিজের গাড়িতে চলে আসুন গড় পঞ্চকোট। বছরের শেষ বা নতুন বছরের শুরুর কটা দিন পরিবার- পরিজনের সাথে কাটিয়ে দিন লাল মাটির পালশ ফুলের দেশে। উঁচু উঁচু পাহাড়, গভীর জঙ্গল, পাথরের লেক, বেগবান নদী ও ঐতিহাসিক সৌধের ভিড়ে হারিয়ে ফেলবেন নিজের যত ব্যস্ততা। দু-একদিনের গড় পঞ্চকোটের রসদ যোগাবে আপনার সারা বছরের ব্যস্ত জীবনে।
|historical place Garpanchkot at purulia | West Bengal tourism |
দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সবার আগে জানতে লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও গুগল নিউজ