সুদীপ ঘোষঃ পুজোর ছুটিতে বাচ্চাদের নিয়ে একটু বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করছেন? পড়াশুনার চাপে সারাবছর বাচ্চারা ফাঁপিয়ে উঠেছে? তাহলে পরিবার নিয়ে এক- দিনের জন্য পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন সুন্দরবনের ভগবতপুর কুমির প্রকল্প (Bhagbatpur crocodile project,Sunderban)। বুলবুল, আম্ফান ও ইয়াসের ধ্বংসলীলা সামলে নতুন করে সেজে উঠেছে ভগবতপুর সল্ট ওয়াটার ক্রোকোডাইল প্রজেক্ট।
কলকাতা থেকে মাত্র ১২০ কিমি দূরে সুন্দরবনের সবুজ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মাঝে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার পাথরপ্রতিমার নিকট ভাগবতপুরে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে এই কুমির অভয়ারণ্য। পরিবারের বাচ্চা ও বয়স্কদের জন্য কিংবা স্কুল- কলেজেদের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্য এই পর্যটন কেন্দ্র সবসময় সেরা। ১৯৭৬ সালে জাতীয় উদ্যান ও রাজ্য সরকারের বনদপ্তরের উদ্যোগে সুন্দরবনের লথিয়ান আইল্যান্ড , ভগবতপুর ও পেটিনস আইল্যান্ড নিয়ে কুমির সংরক্ষণ, প্রজনন ও প্রতিপালনের জন্য এই কুমির প্রজেক্ট গড়ে উঠে।
দেশের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মাঝে সপ্তমুখি নদী মোহনায় গড়ে উঠেছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নোনা জলের এই কুমির প্রকল্প। রং বাহারি ফুলের মেলা ও কুমির সম্পর্কিত তথ্য ছড়ার মাঝে সুন্দর গ্রামীণ মনোরম পরিবেশের ভগবতপুর যেন কুমির রাজ্য। এখানে বড়, মাঝারি ও ছোট বিভিন্ন ধরনের কুমিরের সংরক্ষণ,প্রজনন ও প্রতিপালন সামনে থেকে দেখা যায়। খুব কাছ থেকে প্রায় ১৫-১৬ ফুট লম্বা কুমিরদের শুধুমাত্র ভগবতপুরেই দেখা যায়। এছাড়াও মৃত কুমিরের সংরক্ষণ এবং কুমিরের ডিম সংরক্ষণ ও ডিম ফোটানোর কাজও চাক্ষুষ করতে পারে পর্যটকরা। এখানে প্রায় ছোট- বড় ৫০০ টি নোনা জলের কুমির আছে। প্রতি বছর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডিম ফোটানো, প্রজনন, লালনপালন, শিকার শেখানো ও চিকিৎসার পর প্রায় ৮০-১০০ টা করে কুমির নিকটবর্তী সুন্দরবনের নদী, খাল ও নালাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুজোর ছুটিতে পর্যটকদের জন্য কুমিরদের জীবন যাত্রা, খাবার খাওয়া, নিজেদের মধ্যে কুস্তি ও শিকার ধরা ইত্যাদি উপভোগের একাধিক আকর্ষণ আছে এই কুমির প্রকল্পে।
শিয়ালদহ (Sealdah) থেকে ট্রেনে সরাসরি কাকদ্বীপ (Kakdwip) স্টেশনে নেমে বাসে করে পাথরপ্রতিমা আর সেখান থেকে টোটো করে ভগবতপুর কুমির প্রকল্প পৌঁছে যাওয়া যায়। এছাড়া ধর্মতলা থেকে সরাসরি বাসে গঙ্গাধরপুরব্রীজ পেরিয়ে পাথরপ্রতিমা এবং সেখান থেকে টোটো করে প্রতিমা নদীর ছোট ব্রীজ পেরিয়ে কুমিরের রাজ্যে সহজে পৌঁছে যাবেন পর্যটকরা। ইউনিস্কো স্বীকৃত সুন্দরবন বায়োডাইভারসিটি অঞ্চলের মাঝে সুন্দরী, গাঁড়ান ও গেঁওয়া ইত্যাদির ম্যানগ্রোভ গাছের জঙ্গলের মাঝে ভগবতপুর যেন প্রাকৃতিক প্রেমীদের স্বর্গরাজ্য। কাছের জঙ্গলে হরিণ, বন শুয়োর, বাঘরোল ও বানর ইত্যাদি বন্যপ্রাণীর দর্শন দেখা যায়। ভাগ্য ভালো থাকলে এই ভগবতপুরের জঙ্গলেই ডাঙায় বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও জলে কুমিরের এক সাথে দর্শন মিলতে পারে পর্যটকদের। ভগবতপুরের শ্বাসমূল ও ঠেসমুলের জঙ্গল অসংখ্য রঙে- বেরঙের পাখির কলতানে মুখরিত ।
ভগবতপুরে সপ্তমুখী নদী মোহনার নিকটেই আছেই সুন্দর সবুজ নদীর চর যা একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। ভগবতপুর কুমির প্রজেক্টকে ঘিরে গড়ে উঠেছে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। পাথরপ্রতিমাতে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে গেস্ট হাউস। আগামী দিনে সরকারি ও বেসরকারী উদ্যোগে ভগবতপুরের নিকট আরও গেস্ট হাউস, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কটেজ, টেন্ট ক্যাম্প, হোমস্টে, ট্রলারে জঙ্গল সাফারি, ওয়াচটাওয়ার, যোগাযোগ ব্যবস্থা, লাইট ও সুরক্ষা সহ একাধিক ব্যবস্থা তৈরি করার পরিকল্পনা চলছে। পর্যটন ব্যবস্থার আরও উন্নতি হলে সুন্দরবনের ছোট ছোট দ্বীপ অঞ্চলের মানুষের আরও আর্থসামাজিক উন্নতি ঘটবে। শহরের কোলাহল থেকে দূরে পুজোর ছুটি বা অন্য সময় এক-দুদিনের জন্য পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে বেড়িয়ে আসার আদর্শ স্থান ভগবতপুর। ভগবতপুর কুমির প্রকল্পের অভিজ্ঞতা আপনার বাচ্চাদের বিকাশের অনেক সহায়তা করতে পারে। তাই নিজের এক ঘেয়েমি জীবন ছেড়ে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসুন সুন্দরবনের ভগবতপুর।
দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সবার আগে জানতে লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও গুগল নিউজ