সুদীপ ঘোষঃ বাঙালির প্রাণের পুজো মানেই কাশফুল, হিমেল হওয়া, সাদা মেঘের আকাশ, শিউলি ফুলের সুগন্ধ, ঢাকের তাল, আনন্দ- আড্ডা আর নতুন পোশাক। আর মা বোনদের শাড়ির নাম আসতেই আসে বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের শাড়ি।
সেরকমই বাংলার এক প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁকুড়ার মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরের বালুচরী শাড়ি। সেই প্রসিদ্ধ বালিচরীতেই নতুন নকশা নিয়ে এল এক শিল্পী। এই নকশার নাম “অরুণিমা’। এই নকশার উদ্ভাবক জনপ্রিয় বিষ্ণুপুরি বালুচরী শিল্পী অমিতাভ পাল।
অমিতাভ বাবু প্রতিবছরই পুজোর আগে তার বালুচরীতে নতুন নকশা নিয়ে আসেন। এর আগে রেশমি, কারুকলা, রূপসী ও এক লাখী অনেক নকশার উদ্ভাবনা করেছেন তিনি। এবার তার হাতের ছোঁয়াতেই বালুচরীতে এল নতুন “অরুণিমা” নকশা। এই নকশা অন্য আগের নকশাদের থেকে আলাদা। এই ডিজাইনের শাড়িতে যেমন আছে বাঁকুড়ার টেরাকোটা শিল্পের ছবি তেমনই আছে মহাভারত- রামায়ণের মতো পৌরাণিক কাহিনীর বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি।
সামাজিক চিত্র,বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ, বৃক্ষছেদন রোধের ছবিতে এই নকশা অন্যদের থেকে আলাদা ও অনন্য। এই নকশার শাড়িতে আছে আগেকার সমাজের লোক উৎসব, বাউল- ঝুমুর- কবিগানের দৃশ্য ও সামাজিক প্রথার ছবি। এই নকশার শাড়িতেই দেখা যাচ্ছে বানর খেলা- সাপ খেলা- খাঁচায় বন্দী পশু- পাখি বিরোধী ছবি। পায়রা, বেনেবুড়ি, পানকৌড়ি সহ একাধিক লুপ্তপ্রায় পাখি ও বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পশু সংরক্ষণের বার্তার ছবি। বৃক্ষছেদন রোধ ও বৃক্ষরোপন নিয়েও একাধিক ছবির দৃশ্য ধরে পড়েছে এই “অরুণিমা” নকশার বালুচরী শাড়িতে।
অরুণিমা শাড়ির দাম ১৮ হাজার টাকা। পুজোর মরশুমে যথেষ্ট চাহিদা বাড়ছে এই শাড়ির বলে জানান শিল্পী। এমনকি রাজ্য ও দেশের বাইরে থেকেও অনলাইনের মাধ্যমে বরাত এসেছে অরুণিমার।
ধ্রুপদ সঙ্গীতের শহরে বালুচরী শাড়ি শিল্পে অমিতাভ পাল এক বিখ্যাত নাম। তার হাতের তৈরি একাধিক জনপ্রিয় শাড়ি দেশে বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেছে। তিনি পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ও সম্মান। তার হাতেই তৈরি হয়েছে মাত্র ৫- ৬ হাজার থেকে শুরু করে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত দামী শাড়ির সম্ভার। দেশ সীমানা ছড়িয়ে তার শাড়ি পৌঁছে গেছে বিদেশের মাটিতে। এবার পুজোয় তার আবিষ্কার অরুণিমা বালুচরী শাড়ি। এই পুজোর মরশুমে এই অরুণিমা নকশা শাড়ীই কাঁপাছে বিষ্ণুপুরের বালুচরীর শাড়ির শিল্প। এই শাড়ির নকশা দেখতে ও কিনতে ভীড় করছেন বিষ্ণুপুরের সাধারণ মানুষ থেকে শহরে আগত পর্যটকরা