সন্তু সামন্তঃ সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে “সেক্সটরশন” কথাটি কমবেশি অনেকের কাছেই পরিচিত। আসলে “এক্সটরশন” কথাটি সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে হয়ে গেছে “সেক্সটরশন”। “এক্সটরশন” মানে জোর করে আদায় করা। আর “সেক্সটরশন” হল যৌন প্রস্তাব ও ছবি বা ভিডিওর ভিত্তিতে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা।
বেশ কয়েক বছর ধরে “সেক্সটরশন” এর ঘটনা বেড়ে চলেছে। সচেতনতার অভাব “সেক্সটরশন” এর অন্যতম কারণ। অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে বিপাকে পরে টাকা খোয়ান আবার অনেকে কি করবেন বুঝে উঠতে না পেরে দুর্বৃত্ত দের কাছে অসহায়তার স্বীকার হন।
তাই জেনে নিন – কি এই “সেক্সটরশন” ; কিভাবে “সেক্সটরশন” থেকে সাবধান থাকা যায়; আর দুর্বৃত্তদের ফাঁদে পরলে কি করা উচিত ?
সেক্সটরশন কি ?
যৌন প্রস্তাব ও তার ভিত্তিতে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা হল সেক্সটরশন। এই ধরনের প্রতারণা পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের বিরুদ্ধেই ঘটতে পারে। তাই পুরুষ মহিলা প্রত্যেকেরই আগেভাগে সাবধান হওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে অপরাধের শিকার হওয়া থেকে বাঁচা যায়। এবার জেনে নেওয়া যাক কীভাবে এই অপরাধীদের চক্র কাজ করে ।
কীভাবে সেক্সটরশন হয় ?
সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ এ বিপরীত লিঙ্গের (আপনি ছেলে হলে মহিলা প্রোফাইল ব্যবহার করে ,আর আপনি মেয়ে হলে পুরুষ প্রোফাইল ব্যবহার করে) থেকে আপনার সঙ্গে প্রথমে ভাব জমাবে জালিয়াতরা। শুরুতে বেশ কয়েকদিন চ্যাটের মাধ্যমে আপনার সঙ্গে ভালো ভালো কথা বলে বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করে তারা। তারপরই আসে ভিডিও কলের প্রস্তাব। ভিডিও কলে হয়ত দেখবেন উল্টোদিকের মহিলা বা পুরুষ ক্রমশ নিজেকে অনাবৃত করছেন। আসলে আপনাকে একটি রেকর্ডেড ভিডিও দেখানো হচ্ছে। আর জালিয়াতরা স্ক্রিন রেকর্ডারের মাধ্যমে আপনার ছবি ওই ভিডিওর মাধ্যমে রেকর্ড করে নেয়।
এবার কয়েকদিনের মধ্যেই বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে ওই ভিডিও আপনার পরিচিত দের মধ্যে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হবে। এমনকি দুষ্কৃতীরা নিজেদের পুলিশকর্মি পরিচয় দিয়েও ভয় দেখাতে পারে। টাকা না দিলে পুলিশি ঝামেলার ভয় দেখাতে পারে।
কিভাবে “সেক্সটরশন” থেকে সাবধান থাকা যায় ?
প্রথমেই বলে রাখা ভালো অচেনা নাম্বার থেকে ভিডিও কল এলে ধরবেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় অপরিচিতদের সঙ্গে চ্যাট বা ভিডিও কল থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
মনে রাখা দরকার –
১) সোশ্যাল মিডিয়া বা নেট মাধ্যমে কোনও কিছু শেয়ার করে থাকলে তা চিরকালের জন্য কোনও না কোনোভাবে নেট মাধ্যমে থেকে যায়।
২) পরিচিত হলেও ব্যক্তিগত মুহূর্ত কোনোভাবেই রেকর্ড করতে দেবেন না, এমনকি নিজেও রেকর্ড করবেন না।
৩) অনলাইন / সোশ্যাল মিডিয়া /ভিডিও কলে অপরদিকের ব্যক্তি যদি অন্তরঙ্গ হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে তাহলে আগেভাগে সাবধান হন।
৪) অচেনা ব্যক্তির থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ না করাই উচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য ফেক প্রোফাইল এর ছবি, টাইমলাইন চোখ ধাঁধানো করা হয়।
৫) ডেটিং অ্যাপস বা বৈবাহিক ওয়েবসাইট/অ্যাপের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া ব্যক্তির সম্পূর্ণ খোঁজখবর না নিয়ে কোনোরকম সম্পর্ক না রাখাই শ্রেয়।
দুর্বৃত্তদের ফাঁদে পরলে কি করা উচিত ?
নিজের ভুল বা অসচেতনতার কারণে “সেক্সটরশন” এর শিকার হলে জালিয়াতদের টাকা দেওয়ার আগে অবিলম্বে লোকাল পুলিশ স্টেশন বা সাইবার ক্রাইম থানায় ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানান। এস এম এস / ই মেল / চ্যাট / জালিয়াত এর প্রোফাইল / কল রেকর্ড / ভিডিওর স্ক্রিনশট এবং যদি টাকা দিয়ে থাকেন তাহলে অনলাইন ট্র্যানজাকশান এর প্রমান রাখুন, এগুলি তদন্তে সহায়তা করবে।
তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ কলকাতা পুলিশ এবং সাইবার সেল, দিল্লি পুলিশ
দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সবার আগে জানতে লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও গুগল নিউজ।