সুদীপ ঘোষঃ বাঙালি পর্যটকদের বরাবরই প্রথম পছন্দ “দীপুদা” অর্থাৎ দীঘা- পুরী- দার্জিলিং। কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের মিলনস্থলের অনেক মানুষের ইচ্ছে থাকলেও দীঘা- পুরীর সমুদ্র দেখার সাধ পূরণ হয়নি। আর তাদের জন্য এখন “দুয়ারে দীঘা”।
হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। মালদা (Malda) জেলার ভাটরা বিলের খ্যাতি এখন “মিনি দীঘা” (MiniDigha) নামে ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। বছর ৪-৫ ধরে মালদা ও তার পার্শ্ববর্তী জেলার মানুষ দুধের সাধ ঘোলে মেটাতে ভীড় করছে এই ভাটরা জলাশয়ের ধারে। গ্রীষ্মে শুকিয়ে গেলেও বর্ষা শুরু হতেই মিনি দীঘার রূপ নিয়েছে মালদার ভাটরা বিল। বর্ষা ও শরতের শান্ত বিকালে মনোরম ঢেউ খেলছে বিশাল জলাভূমিতে। হাওয়ার দাপটে মাঝে মাঝে তরঙ্গের মত ছোট ছোট জল উৎচ্ছ্বাসও দেখা যাচ্ছে। আর সেই মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের স্বাদ নিচ্ছেন অসংখ্য প্রকৃতি প্রেমী মানুষ।
মালদা শহর থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে সাহাপুর ও যাত্রাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের মাঝে অবস্থিত লেকের মতো বিরাট জলাশয় ভাটরা বিল। গ্রীষ্মকালে জল শুকিয়ে গেলে এখানেই হয় ধান চাষ। বর্ষাকালে জল বাড়তেই সমুদ্রের রূপ ধারণ করে মালদার দীঘা। এই জলাশয়ের সাথে যোগ রয়েছে মহানন্দা, টাঙ্গন ও বেহুলা নদী ছাড়াও একাধিক খালের। বর্ষায় মোহময়ী হয়ে উঠে এই বিরাট পুষ্করিনি। দক্ষিণী হাওয়া এখানে জলকেলি করে আর বড় বড় স্রোতের ঢেউ ভাঙে পাড়ে। তার সাথেই দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের পাখি এবং শালুক ফুল ও জলাশয়ের পাড়ে শরতের কাশফুলের মেলা। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকছে মানুষের ভীড়। তবে নিরাপত্তার কারণে বন্ধ রয়েছে ভাটরা বিলের নৌকা বিহার।
মালদার জেলা প্রশাসক নীতিন সিংঘানিহা ভাটরা বিলের পরিদর্শনে এসে জানান যে বর্ষা শুরু হতেই ভীড় বাড়ছে এই বিলে তাই পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে মালদা জেলা পুলিশ। ৩৪নং জাতীয় সড়ক থেকে ভাটরা বিল পর্যন্ত বেহাল রাস্তার হাল ফেরাতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আগামী দিনে মালদার পর্যটন শিল্পে গৌড়- আদিনা ফরেস্টের সঙ্গে “মিনি দীঘা” ভাটরা বিলকে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে জেলা প্রশাসনের। সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে আগের মতো বিলের জলে সুরক্ষিত নৌকা বিহার, ঝিলের পাড়ের রাস্তা বাঁধিয়ে উদ্যান, বিলের চারিদিকে আলোক স্তম্ভ ,খাওয়াদাওয়ার হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও ঝিলের নিকটেই রাত্রি যাপনের রিসর্ট সহ এক গুচ্ছ ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে মালদার পর্যটন দপ্তরের। এর ফলে রাজ্য ও রাজ্যের বাইরের পর্যটকদের কাছে মালদার গৌড়ের ঐতিহাসিক সৌধ, আদিনা জঙ্গলের সাথে এক সারিতে আসবে ভাটরা বিলের জলরাশি।
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ভাটরা বিলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় খুশির ঐ অঞ্চলের মানুষ। পর্যটকদের ভিড়ে লাভের মুখ দেখে স্থানীয় ছোট খাটো খাবারের দোকান গুলি। নির্দিষ্ট নিয়মে সুরক্ষিত ভাবে নৌকা বিহার পুনরায় চালু হলে অনেকটা রুজি রোজগার বাড়তে পারে এই অঞ্চলের নিম্নবিত্ত নৌকার মাঝিদের। সরকারি উদ্যোগে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে ভাটরা বিলের নিকট স্থানীয় পিছিয়ে পড়া বাসিন্দাদের। বিশেষজ্ঞদের ধারণা আগামীদিনে কলকাতা বা তার পার্শ্ববর্তী জেলার মানুষের বর্ষা ও শরৎ কালে উইকেন্ডে পছন্দের টুরিস্ট স্পট হতে চলেছে মালদার “মিনি দীঘা” ভাটরা বিল।
দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সবার আগে জানতে লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও গুগল নিউজ