সুদীপ ঘোষঃ পুজোর ছুটিতে পারিবারিক চাপে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ পাননি? তবে পুজোর আমেজ পুরোপুরি কাটার আগেই এক- দু দিনের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করা যেতেই পারে। তাই আজকের প্রতিবেদনে আপনার জন্য থাকল বাংলার বুকেরই এক ‘মিনি জু’ -এর হদিশ।
প্রাচীন গৌড় বঙ্গের ইতিহাসের মাঝেই সবুজে ঘেরা বনভূমি আদিনা ডিয়ার ফরেস্ট। বিভিন্ন গাছের সম্ভারে তৈরি এই বনভূমি হল পাখিদের রাজ্য। প্রতিবছর বর্ষার সময় এশিয়া, ইউরোপ ও সাইবেরিয়া থেকে হাজার হাজার পাখি উড়ে আসে এই জঙ্গলের পাখিরালয়ে। প্রজনন প্রক্রিয়া শেষে শীতের শুরুতে নভেম্বর- ডিসেম্বর মাসে আবার উড়ে যায় আদিনা ফরেস্ট ছেড়ে। এই পাখিদের সংখ্যা নির্ণয়ে প্রতিবছর পক্ষী শুমারি করা হয়। এবারও সেই শুমারি শুরু হল । আগের বছর প্রায় ৩২-৩৫ হাজার পাখি এসেছিল এই জঙ্গলের বুকে। এবারে সংখ্যাটা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
মালদা শহর থেকে কিছুটা দূরে ৩৪নং জাতীয় সড়কের নিকট গাজোলে ১০০ হেক্টর জমির উপর গড়ে উঠেছে আদিনা ডিয়ার ফরেস্ট। বিভিন্ন প্রজাতির দেশী ও বিদেশী পাখি ছাড়াও এই জঙ্গলে দেখা যাবে চিতল হরিণ, নীল গাই, শিয়াল, বনশুয়োর ও বানর।। জঙ্গলের মাঝে রয়েছে বড় বড় কয়েকটি পুকুর বা ঝিল যেখানে পাখি ও বন্য প্রাণীদের জলকেলি উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা।
এই ফরেস্টের মধ্যে রয়েছে মিনি জু ও চিলড্রেন পার্ক। মিনি চিড়িয়াখানাতে দেখা যায় ঘেরিয়াল, কুমির, সাপ, মেছো বিড়াল, কচ্ছপ ও একাধিক বিরল প্রজাতির পশু ও পাখি। শীত কালে মধ্য বঙ্গের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় পিকনিক স্পট এই আদিনা ফরেস্ট। বনদপ্তরের উদ্যোগে ফরেস্টের মধ্যেই গড়ে উঠেছে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। এছাড়াও ফরেস্টের নিকটেই পর্যটকদের থাকার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক লজ, হোটেল ও আবাসন গড়ে উঠেছে। পুজোর ছুটিতেও বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে বাংলার পাখির রাজ্য আদিনা ফরেস্ট।
আদিনা ফরেস্টের কাছেই আছে প্রাচীন গৌড় বঙ্গের একাধিক ঐতিহাসিক নিদর্শন। যেমন – আদিনা মসজিদ, গোল গম্বুজ, ছোট সোনা মসজিদ, বড় সোনা মসজিদ ও হামাম খানা।
ঐতিহাসিক নির্দশনের সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশের মেলবন্ধন এই আদিনা ফরেস্ট পর্যটন ক্ষেত্রে আলাদা মাত্রা দিয়েছে মালদাকে। কলকাতা ও শহরতলীর ব্যস্ততা ও কোলাহল দূরে রেখে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে ইতিহাসের স্থাপত্য ও সবুজ বনভূমিতে ছুটির দু- এক দিন আনন্দে কাটানোর জন্য এটি খুবই প্রিয় জায়গা । শুধু কলকাতা নয়, দক্ষিণবঙ্গ, উত্তরবঙ্গ এমনকি পাশের বিহার থেকেও প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে আদিনার বুকে। সারাবছরই পর্যটকদের আনাগোনা থাকায় ঐ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রাও পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।
কলকাতা থেকে ট্রেনে বা ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে বাস কিংবা গাড়িতে চলে আসুন মালদার আদিনা ফরেস্ট। স্থাপত্যের দেওয়ালে কান পেতে ইতিহাসের পদধ্বনি কিংবা সবুজ জঙ্গলের মাঝে হাজার হাজার রঙবেরঙের পাখিদের মিষ্ট কলতান শুনতে শুনতে কাটিয়ে দিন আপনার ছুটির দু- এক দিন।