সুদীপ ঘোষঃ কলকাতার নিকটে অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র উত্তর ২৪ পরগনার টাকি। বাংলাদেশ সীমানায় ইছামতি নদী ও মিনি সুন্দরবনের গোলপাতার জঙ্গল বারবার টানে পর্যটকদের। কিন্তু বসিরহাটের টাকির অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ প্রাচীন রাজবাড়ী ও ইছামতীতে প্রতিমা বিসর্জন। সেই রাজবাড়ির পুজোয় এবার ধরা দিতে চলেছে প্রাচীন টাকির জমিদারদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি।
প্রাচীন টাকি শহরের চার দিকে ছিল চারটি জমিদারবাড়ি। তার মধ্যে পূর্বদিকের জমিদার বাড়ির পুজো সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী। সেই পূর্বদিকের জমিদার বাড়ি এবার তাদের ৩০০বছরের পুরনো দুর্গাপুজোয় পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের সামনে আদি জমিদারি তুলে ধরতে চলেছে। একটা সময় এই জমিদার বাড়ির পুজো ছিল বঙ্গদেশের অন্যতম প্রাচীন পুজো।
দুর্গাপুজোয় কামান দাগা হত, ১০৮টি মোষ বলি হত , দশমীর দিন ২৬জন বেয়ারা মিলে কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে ইছামতি নদীতে মায়ের বিসর্জন হত । তার পর ইছামতির নদীতে এপার বাংলা-ওপার বাংলার প্রতিমা বিসর্জনের উৎসব হত। বিসর্জন শেষে প্রথা মেনে পান্তা ভাত, কচু শাক, আলু চকা ও মিষ্টি খাওয়ানো হত। এখন কামানের বদলে বাজি পোড়ানো হয়, বলি প্রথা বন্ধ হলেও বলি কাঠ এখনও আছে আর দুই বাংলার বিসর্জন উৎসব গত কয়েকবছর বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার।
এবার পূর্ব পাড়ার পুজোয় প্রাচীন এই সমস্ত রীতির প্রদর্শন থাকছে জমিদার বাড়ি জুড়ে। এরই সাথে থাকছে পুরোনো ধানের গোলা ও গরুর গাড়ি। সতীদাহ প্রথা রোধে রামমোহন রায়ের সাথে জমিদার কালীদাস মুন্সীর উদ্যোগ ও স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়েও টাকির একাধিক ঐতিহাসিক ঘটনা তুলে ধরা হতে চলেছে। প্রতিবছরই এই জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোর টানে চব্বিশ পরগনা, নদীয়া , হুগলি ও কলকাতা থেকে মানুষ ছুটে আসেন। অষ্টমীর দিন পূর্নার্থীদের জন্য থাকে পোলাও, আলুর দম ও মিষ্টির প্রাসাদ। এই পুজোকে ঘিরে বসিরহাট জুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়। জাতি-ধর্ম- বর্ণ নির্বিশষে এই প্রাচীন পুজোর আনন্দে মেতে ওঠে সাধারণ মানুষ। পুজোর কয়েকটা দিন রাজ্য সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের আকর্ষণ থাকে ইছামতির শহর টাকির দিকে।
দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সবার আগে জানতে লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও গুগল নিউজ