বরুণ মুখোপাধ্যায়ঃ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হল বাংলাদেশের পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্মিত এই সেতুটির উদ্বোধন করেন। ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে পদ্মা নদীর উপর নির্মিত এই সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ১৯ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সংযোগ স্থাপন করবে। এর ফলে ভারত-বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দ্বিতলবিশিষ্ট কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে তৈরি ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি বর্তমানে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। এর উপরিভাগে থাকছে চার লেনের রাস্তা যা জাতীয় সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে, সেখানে চলাচল করবে যানবাহন এবং নীচের অংশে চলবে রেল। মোট ১২০ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন এই সেতুটি জলতল থেকে ৬০ ফুট উপরে থাকবে। ৪২টি পিলারের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২২.৫ মিটার চওড়া এই মাল্টিপারপাস ব্রিজটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিল চিনা সংস্থা। সেতুটিতে থাকছে ৪১৫টি বাতিস্তম্ভ যা অন্ধকার হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলবে। জানা গেছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহণের সুযোগ থাকছে এখানে। তাক লাগানো সেতুটি তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০,২০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে রাজধানী-সহ উত্তর-পূর্ব অংশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিল এই সেতু। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হবে সন্দেহ নেই। এই সেতু নির্মাণের ফলে দেশের বার্ষিক জিডিপি ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। জানা গেছে, উদ্বোধনের পর সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা খুলে দেওয়া হলেও রেল পরিষেবা চালু হবে ২০২৪ সালের মার্চ মাস নাগাদ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে এই সেতু নির্মাণ দেশের মানুষের প্রতি হাসিনা সরকারের উপহারের শামিল। দীর্ঘ ২৫ বছরের পরিশ্রমের ফলস্বরূপ বাংলাদেশ হাতে পেল এমন এক চোখ-ধাঁধানো সেতু। দেশের পরিবহণ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে সেইসঙ্গে সড়ক পথে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক আদানপ্রদান বাড়বে। বর্তমানে রেলপথে কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব ৪০০ কিলোমিটার; সময় লাগে প্রায় ৯ ঘণ্টা। পদ্মা সেতুর উপর রেল পরিষেবা চালু হলে দূরত্ব কমে ২৫১ কিলোমিটার হবে ফলে কমে যাবে রেল ভাড়া ও সময়। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেল ব্রিজ থাকলেও সড়ক পথে কোনও ব্রিজ ছিল না। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর সেই সমস্যা দূর হল বলেই মনে করা হচ্ছে। এতদিন বাসে বাংলাদেশের ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে অতিক্রম করতে হত ৩৮০ কিলোমিটার দূরত্ব, সময় লাগত ১২ ঘণ্টারও বেশি। সেতু না থাকায় লঞ্চের উপরে যাত্রীবাহী বাস এবং পণ্যবাহী যান চাপিয়ে পারাপার করতে হত পদ্মা নদী। এখন সেতু নির্মাণ হওয়ায় যাতায়াত অনেকটাই সহজ হবে ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক আদানপ্রদান অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।