সুদীপ ঘোষঃ বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মল্লরাজারা ছিল বাংলার অন্যতম প্রাচীন রাজবংশ। হাজার হাজার বছর ধরে মল্লভূমে রাজত্ব করলেও আজ সেই রাজাদের রাজত্বের আর জৌলুস নেই। তবে পড়ে আছে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও রীতিনীতি।
তাই মহালয়ার কয়েকদিন আগে তিথি মেনে দুর্গাপুজো শুরু হল ধ্রুপদ সঙ্গীতের শহরে। তবে এখানের দুর্গাপুজার মুল আকর্ষণ পটপুজো। পটচিত্র বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ও শিল্প। সেই শিল্পের টানেই দীর্ঘ দিন ধরে এখানে তিনটি পটে বড় ঠাকুরানী, মেজ ঠাকুরানীর ও ছোট ঠাকুরানীর পুজো করা হয় মৃন্ময়ী দুর্গা প্রতিমার সাথে। প্রতি বছর এই প্রাচীন শহরের শাঁখারি বাজারের ফৌজদারদের তৈরি পট দিয়েই পুজো শুরু হয়।
নির্দিষ্ট রীতিনীতি মেনে বিষ্ণুপুরের রঘুনাথ সায়ারের ঘাটে বড় ঠাকুরানীর স্নান করিয়ে মন্দিরের গর্ভ গৃহে প্রবেশ করিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হয়। হাজার হাজার বছরের পুরোনো মল্লরাজাদের এই পুজোর মুল আকর্ষণ কামানের তোপধ্বনি। বড় ঠাকুরানীর স্নান পর্ব থেকে মহাঅষ্টমীর পুজো পর্যন্ত নির্দিষ্ট ক্ষণে কামানের তোপধ্বনি করা হয় বালুচরীর শহরের উপকন্ঠে। প্রাচীন এই পুজোর টানে বাঁকুড়া সহ মেদিনীপুর, হুগলি, বর্ধমান থেকে মানুষরা ছুটে আসে। টানা ১৪ দিন ধরে এই দুর্গা পুজোয় মেতে উঠেন বাংলার এই অন্যতম গুরুত্বপূর্ন পর্যটন নগরী। পুজোর কদিন ভক্তদের জন্য প্রাসাদের ব্যবস্থা থাকে। বিষ্ণুপুর শহর সেজে উঠে এই প্রাচীন পুজোর টানে।
মহাঅষ্টমীর পুজো দর্শনে হাজার হাজার পূর্নার্থীরা। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মেলা বসে পুজোর এই কটাদিন। বিষ্ণুপুর সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অষ্টমীর পুজো শুরু হয় মল্লরাজবাড়ির কামানের তোপধ্বনির শব্দ শোনার পর। টানা ১৪ দিন ধরে চলা এই পুজো বিষ্ণুপুরের সমস্ত ধর্ম, জাতি ও বর্ণের মানুষের কাছে আনন্দধারা বয়ে নিয়ে আসে। রাজবাড়ির প্রাচীন ও ঐতিহাসিক পুজো দেখতে রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও পর্যটকরা ভীড় করেন লাল মাটির বিষ্ণুপুরে।
দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সবার আগে জানতে লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও গুগল নিউজ