সুদীপ ঘোষঃ দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম শাল জঙ্গল লাল মাটির দেশ বাঁকুড়ার জয়পুর। হুগলির আরামবাগ থেকে আহল্যা বাই রোড ধরে বাঁকুড়ার মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর যেতে রাস্তার দুই ধারে দেখা মিলে জয়পুরের গভীর শাল জঙ্গল (Joypur Forest)।
বাঁকুড়ার সোনামুখী থেকে মেদিনীপুরের শালবানি পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ৭০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ বনভূমির একটি বিরাট অংশ জয়পুরের জঙ্গলের গভীরতার সঙ্গে তুলনা করা হয় সুন্দরবনের গভীরতাকে। কিছুদিন আগে সেই জয়পুরের জঙ্গলই হারাতে চলেছিল গভীরতা। চোরাচালানকারি , জঙ্গলে আগুন, গাছের রোগ ও কালবৈশাখী- ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল গভীর জয়পুর ফরেস্ট। আর সেই কারণেই কমে যাচ্ছিল জয়পুরের জঙ্গলের চিতল হরিণের সংখ্যা। বছর কয়েক আগে জঙ্গলের গভীরতা ফেরাতে উদ্যোগী হয় রাজ্যের বন দপ্তর।
আরও পড়ুনঃ Urgent jobs: বেসরকারি সংস্থায় কর্মী নিয়োগ
পঞ্চেত বিভাগের অন্তর্গত বাঁকুড়ার বন দপ্তর জয়পুর জঙ্গলের গভীরতা বাঁচাতে গ্রহণ করে একাধিক ব্যবস্থা। চোরাচালানকারীদের রুখতে রাতেও শুরু হয় নজরদারি, জঙ্গলে আগুন লাগানো বন্ধ করতে জনসাধারনের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়, রোগ গ্রস্ত গাছ নির্বাচন করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় এবং ঝড়ে ক্ষতি গ্রস্ত বৃক্ষ গুলির স্থানে নতুন গাছ লাগানো হয়। আর রাজ্য সরকারের “সবুজ বাড়াও” কর্মসূচিতে শাল গাছের পাশাপাশি সেগুন, পলাশ, মহুয়া ও সোনাঝুড়ির মতো অসংখ্য বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে জয়পুর ফরেস্টে। এই বিশেষ উদ্যোগের ফল হাতে পেয়েছে বনদপ্তর। গভীরতা বৃদ্ধি পেয়েছে জয়পুর ফরেস্টের। আর গভীরতা ফিরে আসতে বেড়েছে চিতল হরিণের সংখ্যা। হরিণের প্রজনন ও সংরক্ষণে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বনবিভাগ। যাতে হরিণ মুক্ত ভাবে বনভূমিতে বিচরণ করতে পারে তাই সর্বদা পাহারা দিচ্ছেন বনকর্মীরা। শুধু হরিণ নয়, জয়পুরের জঙ্গলে দেখা মেলে বানর, শেয়াল ও বিভিন্ন রকমের পাখি। আর বছরের বিভিন্ন সময় জয়পুরের জঙ্গলে রাজ করে বেড়ায় দালমা হাতির দল।
আরও পড়ুনঃ সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট-এ বিভিন্ন পদে নিয়োগ
জঙ্গলের গভীরতা ও বন্য প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে পর্যটন শিল্পের দিশা দেখছে বাঁকুড়ার জয়পুর। মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরের নিকটে সবুজ জঙ্গলের স্বাদ নিতে ভীড় করছেন বাঙালি পর্যটকরা। শুধু গভীর জঙ্গল নয়, জয়পুরেই আছে বিরাট সমুদ্র বাঁধ, ফরেস্ট ওয়াচ টাওয়ার, গোপন গুহা, টেরাকোটার তৈরি প্রাচীন গোকুলচাঁদ মন্দির ও জঙ্গলের মধ্যে ইংরেজদের তৈরি গোপন পরিত্যক্ত বিমানবন্দর। সবুজ জঙ্গলের নিকটেই পর্যটকদের রাত্রি যাপন ও খাওয়াদাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে বনফুল , বনলতা ও বনবিতানের মতো জনপ্রিয় সরকারি ও বেসরকারী একাধিক রিসোর্ট বা আবাসন। মহামারী পরবর্তী সময়ে কলকাতা সহ গোটা বাংলার প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকরা বাঁকুড়ার মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর, শুশুনিয়া হিল, বিহারীনাথ হিল, মুকুটমনিপুর, ঝিলিমিলি ও পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়, বাঘমুন্ডি পাহাড় এবং মেদিনীপুরের গণগনির মতো পর্যটন স্থানে ভ্রমণ করতে বেড়িয়ে মাঝপথে জয়পুরের শাল জঙ্গলে এক-দু দিনের জন্য সবুজের স্বাদ মিটিয়ে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ এবার দশ লক্ষ শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ হবে – ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
সারা বছর জুড়ে পর্যটকদের ভীড় বাড়ছে জয়পুরের সবুজ বনভূমিতে। বিশেষজ্ঞদের দাবি বনদপ্তরের উদ্যোগে জয়পুর জঙ্গলে গাছ ও বন্য প্রাণীর সংখ্যা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় আবার নতুন করে জয়পুর বনভূমি মুখী হচ্ছে রাজ্যের সাধারণ পর্যটকরা। করোনা মহামারী পরবর্তী পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ার নতুন করে আশায় বুক বাঁধছে জয়পুরের বাসিন্দারা। পর্যটন শিল্পে এই জোয়ার বিশেষ ভাবে দিশা দেখাচ্ছে কাঠ, পোড়া মাটি, শাল পাতা , বাঁশ ও বেতের সঙ্গে যুক্ত পিছিয়ে পড়া কুটির শিল্পীদের। জয়পুর ফরেস্টের পর্যটন শিল্পের নতুন দিশা নিয়ে খুশির হাওয়া জয়পুরের সাধারণ মানুষের মধ্যে।
দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সবার আগে জানতে লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও গুগল নিউজ