সুদীপ ঘোষঃ শহরের কংক্রিটের কোলাহলে অস্থির হয়ে উঠছেন? একটু বিরতি চান? তাহলে আর দেরি কেন বেড়িয়ে পড়ুন অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রামের (Jhargram Tourism) উদ্দেশ্যে। পাহাড়, জঙ্গল, নদী, ঝর্না, হ্রদ ও প্রাচীন রাজবাড়ির মাঝে সপরিবারে কাটিয়ে আসুন ছুটির কটা দিন।
ঝাড়গ্রাম হল বর্তমানে জঙ্গলমহলের অত্যন্ত প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। মহামারী পরবর্তী সময়ে হাজার হাজার মানুষ প্রকৃতির স্বাদ নিতে আসছেন ঝাড়গ্রামের বুকে। অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রাম তার নিজের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরূপ হয়ে উঠছে পর্যটকদের কাছে। কলকাতা থেকে মাত্র ১৭০কিমি দূরে ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের গায়ে ঝাড়গ্রাম পর্যটন কেন্দ্রের মায়াবী রূপ সারাবছর ধরে হাতছানি দিচ্ছে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের। একদিকে মায়াভরা সুবর্নরেখা নদী তো অন্যদিকে জঙ্গলের মাঝে বয়ে চলা শান্ত ডুলুং ও তারাফেনি নদী।
ঝাড়গ্রামের অন্যতম মুল আকর্ষণ হল ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ী। এই রাজবাড়ীতেই শুটিং হয়েছে উত্তম কুমারের “সন্যাসী রাজা” কিংবা হাল আমলের “দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন” – এর মতো একাধিক বাংলা সিনেমা। ঝাড়গ্রামের নিকটেই আছে ডিয়ার পার্ক বা মিনি চিড়িয়াখানা। চিলকিগড়ের রাজবাড়ি, কনকদুর্গা মন্দির, সাবিত্রী মন্দির, আদিবাসী সংগ্রহশালা। শাল, সেগুন, তমাল, মহুল ও সোনাঝুড়ি গাছের সবুজ জঙ্গলের মাঝেই ছোট কল্লোলিনী ডুলুং নদী। আর ডুলুং নদীর দুই পাশে বিরল প্রজাতির ঔষধি ও ভেষজ উদ্ভিদের জঙ্গল। ঝাড়গ্রামের সবুজ জঙ্গলের ভিতরের বছরভর লেগে থাকে দালমা হাতির আনাগোনা। হাতি ছাড়াও ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে দেখা যায় হরিণ, হায়না, চিতা বাঘ, বানর, শুয়োর, বন বিড়াল, বাঘরোল সহ নানান প্রজাতির বন্যপশু। বন্যপশু ছাড়াও ঝাড়গ্রামের বুকে দেখা মিলে নানান রঙের পরিচিত ও অপরিচিত পাখি। ময়ূর, ময়না, টিয়া, বন মুরগী ছাড়াও নানান ধরনের পরিযায়ী পাখিদের সমাহার। এছাড়া, ঝাড়গ্রামেই কাছেই আছে ঝিল্লি পাখিরালয়।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে অদূরেই সবুজ ও ঘন বেলপাহাড়ি জঙ্গল এবং কাকড়াঝোড় জঙ্গল। তার মাঝেই আছে বেলপাহাড়ি পাহাড়, গাডরাশিনী পাহাড়, আমলাশোল পাহাড়, সিংলহর পাহাড়, লালজল পাহাড়। চারিদিকে ছোট ছোট পাহাড়ের মেলা আর তারপর ছোট ছোট গাছের সবুজ বনভূমি। শুধু পাহাড় নয়, আছে ঘাগড়া জলপ্রপাত, কেতকী ঝর্না, তারাফেনি নদী ড্যাম। ঝাড়গ্রাম থেকে কাছেই অবস্থিত জামবনি রাজবাড়ি ও হাতিবাড়ি এলিফ্যান্ট করিডোর। জল,জঙ্গল, পাহাড়, ও প্রাচীন স্থাপত্যের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে অপরূপ সুবর্নরেখানদীর আঁকাবাঁকা গতিপথ।
ঝাড়গ্রাম সার্কেলের এই একাধিক আকর্ষণীয় পর্যটন সম্পদ Jhargram পর্যটন শিল্পকে ক্রমেই সমৃদ্ধশালী করে তুলছে। এই পর্যটন ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করেই ঝাড়গ্রাম শহর ও পাশাপাশি অঞ্চলে অনেক সরকারি ও বেসরকারি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ী, গেস্ট হাউস, পর্যটন দপ্তরের লজ, বনদপ্তরের বাংলো, সরকারি আবাসন, হোম স্টে ছাড়াও ঝাড়গ্রাম জেলার পর্যটন ক্ষেত্র জুড়ে ছড়িয়ে আছে অনেক বেসরকারি হোটেল, রিসিট ও লজ।
তাই, শহুরে ব্যস্ত সময়কে দূরে রেখে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সাথে বেরিয়ে পড়ুন ঝাড়গ্রামের পথে। হাওড়া থেকে ট্রেনে কিংবা কলকাতা থেকে ৬নং জাতীয় সড়ক ধরে খড়গপুর বা মেদিনীপুর হয়ে বাস কিংবা নিজের গাড়িতে করে পৌঁছে যান সবুজ জঙ্গলের ছোট শহরে। এছাড়া,WBTDCL- এর ওয়েবসাইট থেকে সহজে টিকিট বুক করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের “এক্সপিরিয়েন্স ঝাড়গ্রাম” প্যাকেজে কলকাতা থেকে বাস করে ভ্রমণ করে আসুন ঝাড়গ্রাম। অপূর্ব সুন্দর ঝাড়গ্রামে এখন সারাবছরই পর্যটকদের আনাগোনায় গমগম করে। আপনিও মনোরম প্রকৃতির স্বাদ নিয়ে আসুন ঝাড়গ্রামের সবুজ জঙ্গল থেকে।
Jhargram Tourism | Westbengal | Historical Place |
দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সবার আগে জানতে লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও গুগল নিউজ