সন্তু সামন্তঃ আত্মহত্যা বা সম্পর্কের ইতি – এই দুটো ক্ষেত্রেই বহুগামিতাই (extra marital affairs) মূলত গল্পের প্লট রচনা করে। বিবাহিত বা অবিবাহিত, কম বয়স্ক বা মধ্য বয়স্ক- এমনকি অবসরপ্রাপ্ত বয়সে এসেও বহুগামিতার কারণে সম্পর্কে ফাটল ধরছে। বহুগামিতা এক জটিল সমীকরণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র শারীরিক কারণই নয়, মানসিক এমনকি পারিবারিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক কারণও বহুগামিতার অন্যতম কারণ হতে পারে।
আমরা এই প্রতিবেদনে বহুগামিতার সংজ্ঞায়িত করব না, বরং এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করব। চলুন প্রথমেই একটা সমীক্ষা দিয়ে শুরু করা যাক –
২০২০ সালে ভারতের প্রথম বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপনের ডেটিং অ্যাপ গ্লিডেনের সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় 55% বিবাহিত ভারতীয় অন্তত একবার তাদের সঙ্গীর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছেন । যার মধ্যে 56% মহিলা ৷
বিয়ের আগে বা বিয়ের পর (extra marital affairs)
বিয়ের আগে বা বিয়ের পর – বহুগামিতা রয়েছে সবক্ষেত্রেই। দেখে নেওয়া যাক কিছু সাধারণ কারণ যা বহুগামিতাকে ত্বরান্বিত করে –
১) আর্থিক, সামাজিক বা পারিপার্শ্বিক চিন্তাভাবনার মতপার্থক্য ক্রমান্বয়ে সম্পর্কে চিড় ধরায়।
২) শারীরিক চাহিদার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি করে।
৩) সঙ্গী বা সঙ্গিনীর মনের মত না হওয়া আর একই সঙ্গে যেমনটা চাই তেমনটা তৃতীয় ব্যক্তির মধ্যে খুঁজে পাওয়াই বহুগামিতার অন্যতম কারণ।
৪) সম্পর্কে একঘেয়েমি। থোরবরি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোর – ঘরে বাইরের ব্যস্ত জীবনে মন চায় সতেজতা। এই সতেজতা এক এক জনের কাছে এক এক রকমের। যদি দুজনেরই চাওয়া পাওয়া এক না হয় তখনই সূত্রপাত হয় বহুগামিতার।
আরও পড়ুন –
- কয়েক হাজার শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ করছে সরকারি দপ্তর
- একসাথে ৫ টি সংস্থায় কাজের খবর
- জেলা আদালতে কর্মী নিয়োগ
- যোগ্যতা থাকলেই চাকরির সুযোগ
- আই ডি বি আই ব্যাঙ্কে ১৫৪৪ জন কর্মী নিয়োগ
পরকীয়ার বীজ কি লুকিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কে ?
দুইজন পরিণত মানুষের প্রেম ভালোবাসাকে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা এবং শুধু সেই সম্পর্ককে বৈধ করে বাকি সকল সম্পর্ককে অবৈধ করে দেওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে পরকীয়ার বীজ।
ধরুন বহু বছর ধরে আপনি সুস্থ বৈবাহিক সম্পর্কে রয়েছেন। কিন্তু কোনও একদিন এমন কারো সঙ্গে আপনার দেখা হওয়ার পর মনে হল – এই তো এই মানুষটিই তো হতে পারত জীবনসঙ্গী, যেমনটা আমি চেয়েছি। আপনি বর্তমান সম্পর্কের খাতিরে, সামাজিক লাজলজ্জার খাতিরে হয়ত নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবেন, কিন্তু মনের মধ্যেকার ভাবনাকে কি দমিয়ে রাখতে পারবেন ? নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করতে চাইলে জড়াবেন পরকীয়া সম্পর্কে আবার নিজের ইচ্ছে কে দমিয়ে রাখলে উদাসীন হবেন প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কে। এ এক বিচিত্র সমস্যা।
পৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই বিয়েটাই একমাত্র সম্পর্ক এবং তাদের স্বামী বা স্ত্রী তাদের একমাত্র সঙ্গী। কিন্তু উল্টোদিকের মানুষটাকেও তো সেই ভাবনায় ভাবিত হতে হবে। শুধুমাত্র বিষয় আসয়, সামাজিক সম্পর্ক অথবা বংশমর্যাদার কথা ভেবে কখনই সুখী সম্পর্ক হয় না। সম্পর্কে সামাজিক দিক ছাড়াও শারীরিক এবং মানসিক দিক ও রয়েছে। আর তার জন্যই কোন নারী কোন পুরুষের জন্য অথবা কোন পুরুষ কোন নারীর জন্য ঠিকঠাক এ ব্যাপারে সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যেই মত বিরোধ রয়েছে।
extra marital affairs – আইন কি বলছে ?
২০১৮ সালের আগে পর্যন্ত ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ নম্বর ধারা অনুসারে পরকীয়া ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দেয় , পরকীয়া সম্পর্ক অপরাধ নয়। ওই আইন ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং নারী-পুরুষ এর সমান অধিকারের পরিপন্থী। এই রায়ের ফলে ১৫৮ বছরের আইন কার্যত বিলোপ হয়ে যায়।
পরকীয়ায় – বিভিন্ন প্রশ্নের সূত্রপাত
প্রাতিষ্ঠানিক সমাজ ব্যবস্থায় বিয়ে দরকার। দরকার সুস্থ সম্পর্ক ও সুখী পরিবারের। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে দেখাশুনো করে বিয়ের ক্ষেত্রে আদৌ কি দুটি মানুষ এক মননে বিয়েতে রাজী হয় ? নিজেরা দেখাশুনো করে ভালোবেসে বিয়ে করলে আদৌ কতটা সমর্থন পায় পরিবার বা সমাজের ? বিয়ের পর সংসারের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে আদৌ কি প্রথম দিনের ভালোবাসার আবেগ থাকে ? আদৌ কি যৌবনের মত বয়সকালে নিজেকে ভালোবাসার সুযোগ পাওয়া যায় ? এই সবকটি প্রশ্নের উত্তর হয়ত পজিটিভ হতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে হয়ও । কিন্তু না হওয়ার থেকেই তো জন্ম নেয় পরকীয়া।
পরকীয়া সমাজ বা মানবিক চোখে অপরাধ। পরকীয়ার কারণে শেষ হয়ে যেতে পারে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ, নষ্ট হতে পারে পারিবারিক বা আত্মীয়তার সম্পর্ক, এমনকি চরম মূল্য ও চোকাতে হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন অন্য জায়গায় ! কারো মন যদি অন্য মনে মজে যায় হয়ত কাউন্সেলিং করে ফিরিয়ে আনা যেতেও পারে। কিন্তু আগের মত কি সেই আবেগ থাকে ?
বিভিন্ন সামাজিক অনুসন্ধান, গবেষণা বলছে এই মন জিনিসটা বড্ড বিচিত্র। প্রতি মুহূর্তে সে বাঁচতে চায়, খুঁজে ফিরে বৈচিত্র্যের। বর্তমান সম্পর্কের মধ্যেই যদি সেই নতুনত্ব, বৈচিত্র্য খুঁজে পায় তাহলে মন পায় বাঁচার রসদ। কিন্তু যদি না পায় তাহলেই তাল কাটে সম্পর্কের। তবে এটাও ঠিক দায়িত্ব দু তরফেই। আপনি চাইলেই জড়াতে পারেন নতুন সম্পর্কে, আবার চাইলেই বর্তমানকে সঙ্গে নিয়েই প্রতিদিন বাঁচার রসদ খুঁজে পেতে পারেন। সম্পর্ক আপনার, তাই দায়িত্বও আপনার।
সোশ্যাল ইস্যু, রিভিউ, লাইফস্টাইল, স্বাস্থ্য, বিনোদন, অর্থনীতি এবং শিক্ষা ও চাকরির তথ্য সবার আগে জানতে লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও গুগল নিউজ |