তিয়াশা ভক্তা: না ফেরার দেশে চলে গেলেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ (Elizabeth II)। জানা যায় গত বছর অক্টোবর মাস থেকেই বার্ধক্য জনিত কারণে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন রানী। হাঁটা চলাও করতে পারতেন না সেভাবে। গতকাল ০৮/০৯/২০২২ তারিখ বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৬ টায় (ভারতীয় সময় রাত ১১ টা) স্কটল্যান্ডের বালমোরা প্রাসাদে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। মৃত্যুকালীন বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রানীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে বেশ উদ্বেগের ছাপ পড়ে চিকিৎসকের মধ্যে। তখনও তিনি ছিলেন ওই বালমোরা প্রাসাদে। খবর পেয়েই সেখানে পৌঁছে যান রাজ পরিবারের সদস্যসহ রানীর চার ছেলে মেয়ে – যুবরাজ চার্লস (৭৩) ,রাজকুমারী অ্যান (৭২), যুবরাজ অ্যান্ড্রিউ (৬২),যুবরাজ এডওয়ার্ড (৫৮)। আমেরিকা থেকে ছুটে আসেন চার্লস পুত্র হ্যারি এবং তার স্ত্রী মেগান। নেট মাধ্যমে সুস্থতা কামনা করেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস সহ সকল মন্ত্রী, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা।
গত মঙ্গলবারই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদে লিজ ট্রাসকে নিয়োগ করেছিলেন তিনি। সিংহাসনে বসার পর ১৫ জন প্রধানমন্ত্রীকে তিনি নিয়োগ করেছেন। ওই দিনই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কাছ থেকে ইস্তফা পত্র গ্রহণ করেন তিনি। তারপরই নতুন প্রধানমন্ত্রী রানীর সাথে দেখা করতে যান প্রাসাদে । তখনই বেশ কিছু ছবি উঠে আসে নেট দুনিয়ায়। লাঠি হাতে সেভাবে অসুস্থ মনে হয়নি তাকে। ক্যান্টাবেরিয়ার আর্চবিসপ জস্টিন ওয়েলবি তার সুস্থতা প্রার্থনা করেছিলেন নেট মাধ্যমে। চিকিৎসকের উদ্বেগ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই দেশ জুড়ে সকলের চিন্তায় কেবল রানী ও তার পরিবার। তবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এইরকম এক খবর সবাইকে বেশ অবাক করিয়ে দেয়। তিনি ছিলেন সারা বিশ্বের প্রেক্ষাপটে নারী শক্তির প্রতীক। তিনিই হয়ে উঠেছিলেন আধুনিক পৃথিবীর শাসক।
১৯২৬ সালে ২১ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেছিলেন ছোট্ট লিলিবেট। সময়টা ১৯৩৬ তখন সিংহাসনে রাজ করছিলেন জেঠু অষ্টম এডওয়ার্ড। লিলিবেট আলবার্টের দ্বিতীয় সন্তান। স্বভাবতই রাজ মুকুট মাথায় আসার সম্ভাবনায় তৃতীয় স্থানে। তবে কর্তৃত্বের জিন ও ভাগ্য সময় বদলে দিল। এডওয়ার্ড ডিভোর্সি ওয়ালিস সিম্পসন এর সাথে ভাগ্য জুড়ে ওই বছরই সিংহাসন ত্যাগ করলেন। ষষ্ঠ জর্জ নাম নিয়ে সিংহাসনে বসলেন অ্যালবার্ট । এরপরই দিদি মার্গারেটকে পেরিয়ে সিংহাসনের মুকুটের আলো পড়লো সেই লিলিবেট ওপর। ভবিষ্যত রানী এলিজাবেথ - এলিজাবেথ আলেকজান্ড্রা মেরি উইন্ডসর । মাত্র২৫ বছর বয়সে বাবার পর ১৯৫২ সালে তিনি সিংহাসনে বসেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই রাজতন্ত্রের গুরুত্ব শিথিলতার বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন বিশ্ববাসী। সেই অবস্থা থেকে এই একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত দীর্ঘ ৭০ বছর ব্রিটেনের সিংহাসন অলংকৃত করে ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ১৫ টি কমনওয়েলথ রাজ্যের রানী ছিলেন তিনি।
৭০ বছরের শাসনকালে ১২৯ টা দেশে ৩০০ বার রাজ্য সফরে গিয়েছিলেন তিনি। নিজের রাজ্যভিষেক মানুকে সরাসরি টিভিতে দেখার ব্যবস্থা করে দিয়ে তিনি। সাধারণ মানুষের প্রাসাদে ঢোকার পথ তিনিই করে দেন। বাকিংহাম প্রাসাদের ওয়েবসাইট তৈরি তারই কৃতিত্ব। এককথায় সাধারণ মানুষের নাড়ি বুঝতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ৭৫ বছর বয়সে মসজিদে পা রেখে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি গোঁড়া নন।
গতকাল সেই রাজতন্ত্রের অবসান ঘটলো।এই উজ্জ্বল এক ব্যক্তিত্বের তিরোধান শোকাহত সারা বিশ্ব। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু রানীর মৃত্যুতে রানীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছেন বিশ্ব এক মহান ব্যক্তিত্বকে হারালো। প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ কংগ্রেস পার্টির রাহুল গান্ধী, মুখ্য মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রানীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে টুইট করেছেন।
প্রসঙ্গত, চার্চ ওফ্ ইংল্যান্ডের ও প্রধান ছিলেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। আজ শেষ যাত্রার আগে তার দেহ নিয়ে যাওয়া হবে লন্ডনে।
দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সবার আগে জানতে লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও গুগল নিউজ