সুদীপ ঘোষঃ গত দু-বছর করোনার কোপে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল ডুয়ার্সের (Dooars) পর্যটন শিল্পে। সেই করোনার কালো ছায়াকে মুছে নতুন করে লাভের আশায় বুক বাঁধছেন উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
ডুয়ার্স বলতে পর্যটকদের প্রথমেই মনে আসে লাটাগুড়ি, জলদাপাড়া, বক্সা, রাজাভাতখাওয়া ও জয়ন্তী। কিন্তু জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ও বক্সা জাতীয় উদ্যানের মাঝে আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলার গভীর জঙ্গল চিলাপাতা পর্যটনকেন্দ্রেও আকর্ষণ বাড়ছে পর্যটকদের। পুজোর ছুটিতে ধীরে ধীরে বুকিং বাড়ছে ডুয়ার্স কন্যা চিলাপাতা ফরেস্টের (Chilapata Forest) পর্যটন কেন্দ্রে।
আলিপুরদুয়ার শহর থেকে মাত্র ২০ কিমি দূরে ডুয়ার্সের অন্যতম গভীর জঙ্গলের মধ্যে নির্জন পর্যটন কেন্দ্র চিলাপাতা। গভীর সবুজ জঙ্গলের মধ্যে তোর্সা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে এই ইকো ট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র। তোর্সা ছাড়ার একাধিক নাম না জানা ছোট কল্লোলিনী পাহাড়িয়া নদীর মাঝে অবস্থিত প্রাচীন কোচ রাজা চিলা রায়ের মৃগয়াক্ষেত্র চিলাপাতা ফরেস্ট। দুই জাতীয় উদ্যানের মাঝে হাতি করিডোর এই চিলাপাতা।
এই জঙ্গলের মাঝেই আছে প্রাচীন নল রাজাদের গোপন ফোর্ট। এই গভীর জঙ্গলকে কেন্দ্র করেই চিলাপাতার কোদলবস্তিতে গড়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন পর্ষদের সরকারি পর্যটন অবসান। এছাড়াও চিলাপাতা ফরেস্টের মধ্যেই গড়ে উঠেছে একাধিক বেসরকারি হোমস্টে বা আবাসন, টেন্ট ক্যাম্প, হোটেল, লজ ও রেস্টুরেন্ট। আবাসনের জানালা ও ব্যালকনি থেকেই দর্শন পাওয়া যায় গন্ডার, হাতি, হয়না, বাইস, হরিণ, চিতাবাঘ, বানর ও বন শুয়োরের। চিলাপাতার নির্জন পর্যটন কেন্দ্র ময়ূর, ময়না, টিয়া, শকুন ও বন মুরগির সহ অসংখ্য নাম না জানা পাখিদের কলতানে সারাদিন মুখরিত থাকে।
চিলাপাতা পর্যটন কেন্দ্রের অন্যতম মুল আকর্ষণ জঙ্গলের মধ্যে বসবাসকারি রাভা উপজাতির নৃত্য, সুরক্ষিত জঙ্গল সাফারি, নদীতে নৌকা বিহার ও সন্ধ্যায় ক্যাম্প ফায়ার। শহুরে কোলাহল ও ব্যস্ততাকে দূরে ঠিলে গভীর ও সবুজ জঙ্গলের মাঝে নির্জনতায় ছুটি কাটানোর আদর্শ ঠিকানা এই চিলাপাতা।
এবার পুজোর ছুটিতে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক আসার আশায় বুক বাঁধছেন পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা। দেরীতে হলেও ধীরে ধীরে বাড়ছে পুজোর ছুটিতে পর্যটকদের বুকিং- এর সংখ্যা। তবে পর্যটন ব্যবসায়ীদের দাবী চিলাপাতা পর্যটন কেন্দ্রের পর্যটকদের ভিড় বাড়াতে সরকারি প্রচার, সরকারি সাহায্য, নিরাপত্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও একাধিক আধুনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। চিলাপাতা পর্যটন কেন্দ্রের আরও উন্নতি ঘটলে আরও মানুষ আসবে চিলাপাতায় ফলে ঐ অঞ্চলের আদিবাসী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবন যাত্রায় মান উন্নয়ন ঘটবে। সবুজ জঙ্গলের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের টানেই চিলাপাতায় আসেন পর্যটকরা। পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে উইকেন্ডে ছুটি বা পুজোর ছুটি কাটানোর ডুয়ার্সের অন্যতম আদর্শ পর্যটন স্থান এই চিলাপাতা ফরেস্টে।
দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সবার আগে জানতে লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও গুগল নিউজ