সুদীপ ঘোষঃ দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাংলায় বর্ষার আগমন ঘটেছে। মাঝে মধ্যেই কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে আকাশ । আর সেই মেঘলা আকাশে নাচ ময়ূরী নাচ দেখতে পর্যটকরা ভীড় করছেন নদীয়ার বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যে।
কলকাতার কাছে শিয়ালদহ- লালগোলা ট্রেন লাইনের বেথুয়াডহরি স্টেশনে নেমে বেথুয়া ফরেস্টের দিকে ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকরা। হিসাব বলছে করোনা মহামারী পরবর্তী সময়ে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকদের আগমন হয়েছে বেথুয়াডহরি স্যাংচুয়ারিতে। কলকাতার নিকট শিশু, অর্জুন, শাল, সেগুন ও সোনাঝুরি গাছে ভরা এই বনভূমি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়।
এই জঙ্গলের প্রধান আকর্ষণ হল জাতীয় পাখি ময়ূরী ও বিরল মদনটাক পাখি। এছাড়াও এই জঙ্গলে দেখা মেলে কোয়েল, শালিক, ময়না, টিয়া ও কাকাতুয়ার মতো প্রচুর রঙে বেরঙের পাখি। এই জঙ্গলের জলাশয়ে রয়েছে বিরল প্রজাতির ঘড়িয়াল সংরক্ষণ। রাজ্য সরকারের বন দপ্তরের উদ্যোগে আধুনিক প্ল্যান্টেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে এই জঙ্গলের গভীরতা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। জঙ্গল বাঁচানোর উদ্দেশ্যে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ, আগুন লাগানো নিষেধ, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও প্রজনন ব্যবস্থা, চড়াচালানকারী বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ও বৃক্ষরোপন সহ একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রাজ্য বনদপ্তর ।
জঙ্গলের গভীরতা বাড়তেই জঙ্গলের বুকে নিরাপদে ময়ূর, হরিণ, বানর, বন শুয়োর, শিয়াল ও আজগর সাপ ইত্যাদি প্রাণী চড়ে বেড়ায়। জঙ্গলের মধ্যেই গড়ে উঠেছে ভেষজ গাছের বাগান ও শিশুদের জন্য পার্ক। ছাত্র- ছাত্রী ও গবেষকদের জন্য বিভিন্ন বন্যপ্রাণের ছবি ও ভিডিও প্রদর্শনী নিয়ে তৈরি নেচার ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার। সবুজ জঙ্গলের ভিতর নির্জন পরিবেশে ওয়াচ টাওয়ার থেকে বন্যপ্রাণী দর্শন ও জঙ্গলের ভিতরে অবস্থিত শান্ত জলাশয়ের পাশে বসে প্রকৃতির স্বাদ নেওয়ার সেরা পর্যটন কেন্দ্র।
এই বেথুয়া ফরেস্টকে কেন্দ্র করেই নির্জন গ্রাম্য পরিবেশে গড়ে উঠেছে সরকারি ও বেসরকারী উদ্যোগে হোমস্টে ও হোটেল- রেস্টুরেন্ট। শহুরে ব্যস্ততা দূরে সরিয়ে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলার ভ্রমণ রসিক মানুষ এক- দিনের ছুটিতে ট্রেন লাইন কিংবা ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে পৌঁছে হচ্ছে নদীয়া জেলার অন্যতম এই বনভূমিতে। তবে জঙ্গলের ভিতরের জলাশয়ে পুনরায় সুরক্ষিত বোটিং চালু করা, স্যাংচুয়ারির এন্ট্রি ফিস কমানো ও মিনি জঙ্গল সাফারির দাবি জানাচ্ছেন পর্যটকরা। বেথুয়া ফরেস্টের পর্যটন শিল্পকে ভরসা করে ঐ অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার উন্নতি হতে শুরু করেছে।
পুজোর ছুটিতে পরিবার ও প্রিয়জনদের নিয়ে সবুজ বনক্ষেত্রে প্রকৃতির আস্বাদন গ্রহণ করতে আরও বেশি সংখ্যক পর্যটন আসার আশা করছেন স্থানীয় পর্যটন শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষ জন। গ্রীষ্মকালের উত্তাপ কমতেই প্রতিবছর বেথুয়াডহরি ফরেস্টে স্কুল- কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে বাড়ির বয়স্করা ভীড় করেন । বর্ষা কালের মেঘলা আকাশে মনের মানুষের হাতে হাত রেখে এই গভীর শান্ত জঙ্গলের ভিতর ময়ূরের নাচ উপভোগ যেন স্বর্গীয় সুখ। আর সেই আরন্যক সৌন্দর্য্যের মধ্যে অপরূপ বন্য জীবনের স্বাদ নিতে লাইন দিচ্ছেন প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকরা।