সঞ্জয় বৈরাগী: আজ থেকে শুরু হল জগদ্ধাত্রী পুজো (Chandannagar Jagadhatri puja)। আর জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই উঠে আসে বাংলার চন্দননগরের নাম। বিগত দুবছর পর আবারও স্বমহিমায় ও সারম্বরে পালিত হতে চলেছে চন্দননগরের এই ঐতিহ্যবাহী পূজা।
এক সময়ের এই ফরাসি উপনিবেশ বরাবরই আলোর শহর হিসেবে পরিচিত। গঙ্গার তীরবর্তী এই শহরে মাতৃ রূপে পূজিত হন জগত জননী জগদ্ধাত্রী।হেমন্তের শীতল হওয়ার পরশকে সঙ্গে নিয়েই আলোর মালায় সেজে ওঠে এই শহর।
জগদ্ধাত্রী পূজা বাঙালি হিন্দু সমাজের একটি বিশিষ্ট ধর্মীয় অনুষ্ঠান। বাঙালি হিন্দুদের ধর্মীয় মানসে রাজসিক দেবী দুর্গা ও তামসিক দেবী কালির পরেই স্থান সত্ত্বগুণের দেবী জগদ্ধাত্রীর। বিশেষত, নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর এবং হুগলী জেলার চন্দননগরে আয়োজিত পূজা, গোটা বাংলায় তো বটেই, এমনকি সমগ্র ভারতবর্ষেও সুবিখ্যাত।
কৃষ্ণনগর ও চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর মধ্যে কোনটি আগে শুরু হয়েছে তা নিয়ে রয়েছে বহু বিতর্ক। এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায়না। লোকমুখে প্রচারিত যে, ১৭৫৪ খৃষ্টাব্দে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ীতে এই পূজার প্রথম সূচনা করেন। পাশাপাশি,ফরাসি শাসিত চন্দননগরের প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বিশিষ্ট বন্ধু। কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ীতে জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনার সময় তিনি সেখানে আমন্ত্রিত হন। সেখানে পূজা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে, ইন্দ্রনারায়ণ চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজা আরম্ভ করেন। এই পূজা চন্দননগরের আদি পূজা বা আদি মা নামে পরিচিত। আজও, চৌধুরী পরিবারের উত্তর পুরুষরা প্রতি বৎসর এই পূজার আয়োজন করেন।
থিমের পুজো, আলোর ঝলকানি আর প্রতিমার মুখশ্রী। এই তিন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগর ও কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পূজোর উৎসব বিশ্বের দরবারে এক বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। উল্লেখ্য, চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার বিশেষ আকর্ষণ হলো জগদ্ধাত্রী প্রতিমা নিরঞ্জনের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বিশ্বপ্রসিদ্ধ এই শোভাযাত্রা গত দু’বছর করণা মহামারীর কারণে কার্যত থমকে যায়,আর এই আবহে শহরের অনেক আলোকশিল্পীই তাদের পেশা বদল করতে বাধ্য হয়।
পরিশেষে এটিই আশা করা যায় যে,উৎসবপ্রিয় বাঙালি জাতির এই বর্ণাঢ্য ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক পার্বণটি আরও বহু যুগ ধরে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়েই পালিত হোক।
| Chandannagar Jagadhatri puja |