সুদীপ ঘোষঃ পথের ধারে কাশ ফুলের দোলা ও আকাশে সাদা মেঘের ভেলা জানিয়ে দিচ্ছে যে পুজো আসতে আর বেশি দেরি নেই। শিউলি ফুলের সুগন্ধে বাঙালির ঘরে ঘরে এখন পুজোর তোড়জোড় চলছে। সেই পুজোর দিকে তাকিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন বাংলার ঢাকিরা।
ঢাকের সেই মনোরম তাল ছাড়া বাঙালির পুজো অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বাঙালির পুজোর আনন্দ দিতেই তৈরি হচ্ছেন হুগলি- বর্ধমান- বীরভূমের ঢাকিরা। শহরে পুজোর কটাদিন বাড়তি আয় করেই নিজেদের সংসার চালানোর স্বপ্ন প্রতিবছর দেখেন গরীব বা নিন্ম মধ্যবিত্ত ঢাকিরা। পারিশ্রমিক ছাড়াও নিজেদের শিল্পকলার টানে আসে বাড়তি বকশিস আর সেই দিয়েই ছেলে- মেয়ের জন্য নতুন জামা- কাপড় কিনে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। গত দুবছর করোনা মহামারীর কারণে অনেকেরই বন্ধ ছিল শহরে যাওয়া। সেই দুঃস্বপ্নের দিন কাটিয়ে এবার পুজোয় কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী শহরতলীতে ঢাকের বোল তুলবেন ঢাকিরা।
পুজোর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি, এখন ঢাকিদের চরম ব্যস্ততা। হুগলির নালিকুল, হরিপাল, আরামবাগ, গোঘাট, কামারপুকুরের মাঠের ধারে বা নদীর পাড়ে বা বড় গাছের নিচে ঢাকিরা তালিম দিচ্ছেন নিজেদের ঢাকে। পাড়ায় পাড়ায় উঠছে ঢাকের বোল। চারিদিক যেন পুজো পুজো গন্ধ । কয়েকদিন বাদেই কাঁধে ঢাকের বাঁয়া নিয়ে বেড়িয়ে পড়বেন শহরের উদ্দেশ্যে। ষষ্ঠী থেকে দশমী তাদের শিল্পকলায় মুখরিত হবে পুজো প্যান্ডেল। ক্লাব থেকে বারোয়ারী পুজো ঢাকের তালে হবে ধুনুচি নাচ থেকে সিঁদুর খেলা। নিজেদের ঘরে অভাব- অনটনের বিষাদ সুর চেপে ঢাকের তালে তারা মাতিয়ে তুলবেন আনন্দের পুজো মণ্ডপ গুলি। জাত, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে ঢাকের মিষ্টি তালেই বাঙালির বড় উৎসবে মুখরিত হবে মানুষ মন ও প্রাণ।
আনন্দের সুর বাহক ঢাকিদের এখন সাজো সাজো রব। পেটে অভাব আর মুখে অমলিন হাসি নিয়েই তারা তৈরি হচ্ছেন আকাশে বাতাসে আনন্দের সুর ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য। বাঙালির দুর্গোৎসব শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, রুজি রোজগারের উৎসবও। তাই তো বলা হয় মা দুর্গতিনাশিনী যে কদিন থাকেন, সেই কদিন সবার জীবনের দুর্গতি মুছে যায়।
দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সবার আগে জানতে লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও গুগল নিউজ